আমি, দেখিনি ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, আমি দেখিনি ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান! আমি, দেখিনি ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ! তবে, আমি দেখেছি ২৪-এর গণবিপ্লব; ১৫ই জুলাইয়ে আমার ভাই-বোনদের এবং সাধারণ জনগণের রক্তে-মাখা রাজপথ! আমি দেখেছি মিছিল সেøাগানে কাঁপানো রাজপথ, আমি, দেখেছি ২৪-এর কোটা আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার ওপরে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করা আমার ভাইদের পড়ে থাকা নিথর রক্তাক্ত দেহ! আমরা চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার। ‘‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার!; কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার’’ যে স্লোগান দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা ও সারাদেশকে কাপিঁয়ে তুলেছিল। যেমন কাপিয়ে তুলেছিল স্বৈরাচারী গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার মসনদ। তরুণ প্রজন্মের এই রুখে দাঁড়ানোর আখ্যানই হলো ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থান।
দুঃশাসনকে আড়াল করার চেষ্টা করা হলেও স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের চূড়ান্ত পতন ঠেকাতে পারেনি দৃশ্যমান অবকাঠামো উন্নয়নকেন্দ্রিক প্রচারণার মাধ্যমেও। ছাত্র-জনতার এক রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ৫ আগস্ট ২০২৪ শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। কুখ্যাত গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসানের প্রাথমিক কারণ হলো, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার গুলি বর্ষণে শতশত মানুষ হত্যা। এ সময় অন্তত সহস্রাধিক মানুষ নিহত ও প্রায় ৪০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। তবে এ প্রাথমিক কারণের পেছনে রয়েছে শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলজুড়ে ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা হরণ, বিরোধীদল ও ভিন্নমতাবলম্বীদের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও পুলিশি নিপীড়ন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ঋণের নামে ব্যাংক লুণ্ঠন, সরকার ঘনিষ্ঠদের ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থপাচার, সচিবালয় থেকে বিচার বিভাগ পর্যন্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক দলীয়করণ, দ্রব্যমূল্যের ব্যাপক ঊর্ধ্বগতি, ভারতের সঙ্গে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি কারণে সৃষ্ট গভীর জন অসন্তোষ। এইসব কারণে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের জমানো সীমাহীন ক্ষোভ থেকে দেশের সাধারণ জনগণ ছাত্রদের আন্দোলনের সমর্থনে রাস্তায় নেমে আসে। ছাত্রদের আন্দোলনের ৯ দফা থেকে ১ দফায় রূপলাভ করে। সমন্বয়কদের সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করা ঐতিহাসিক ভূমিকা। ৫ আগস্ট ২০২৪ সোমবার ভোর থেকেই শাহবাগে জমায়েত হয়ে গণভবন অভিমুখে ছাত্র-জনতা মার্চ শুরু করে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন, গণহত্যা, জুলাই বিপ্লবের রক্তাক্ত দিনলিপি, সমন্বয়কদের বয়ানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেপথ্যের ঘটনা, জুলাই শহীদ ও আহদেরদের বীরত্ব গাঁথা, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কীভাবে ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠে, শেখ হাসিনার পলায়ন ইত্যাদি নানান বিষয়ে বিবরণ এবং ছাত্র-জনতার মনে কথাগুলো এ বইতে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। গণহত্যার বিবরণ ও হত্যাকারীদের ছবিসহ প্রমাণ্য চিত্র বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা গণমাধ্যমের ওপর একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বানোয়াট পরিসংখ্যান আর বিভিন্ন দৃশ্যমান অবকাঠামো উন্নয়নকেন্দ্রিক প্রচারণার মাধ্যমে দুঃশাসনকে আড়াল করার চেষ্টা করা হলেও তা আওয়ামী লীগ সরকারের চূড়ান্ত পতন ঠেকাতে পারেনি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেজন্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দুঃশাসনামল থেকে শিক্ষা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এই বইয়ের পাঁচটি অধ্যায়ে ২৪-এর গণবিপ্লবের বিবরণের পাশাপাশি কীভাবে ইতিহাসের কুখ্যাত স্বৈরাচার গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা, তাঁর দলীয় সমর্থক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সহস্রাধিক ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে এবং প্রায় ৪০ হাজার আহত হয়। অসংখ্য মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। প্রায় ২ হাজার ছাত্র-জনতা এক চোখ বা দুটো চোখের আলো হারিয়ে ফেলে চিরদিনের জন্য। কেউ কেউ শতাধিক রাবার বুলেট শরীরে বহন করে বেড়াচ্ছেন। এই বইটিতে সচিত্র প্রতিদেন এবং শহীদ ও আহতদের পরিসংখ্যান এবং বীরত্বগাঁধা জীবনের বর্ণনা করা হয়েছে।
Title | ৩৬শে জুলাই গণঅভ্যুত্থান |
Author | মুহাম্মদ নূরে আলম ,Muhammad Noor Alam |
Publisher | ৩৬শে জুলাই থিঙ্কট্যাঙ্ক গ্রুপ,July 36th Think Tank Group |
ISBN | |
Edition | 1st edition 2024 |
Number of Pages | 304 |
Country | Bangladesh |
Language | Bengali, |
0 Review(s) for ৩৬শে জুলাই গণঅভ্যুত্থান