খালেদা জিয়া ব্যক্তিগত জীবনে অনেক দুঃসময়ের মুখোমুখি হয়েছেন। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি আরেকটা ধাক্কা খেলেন। তাঁর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়ার রাজধানীকুয়ালালামপুরে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মৃত্যু হয়। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে খালেদা প্রথমে নির্বাক হয়ে পড়েন। এরপর তিনি অঝোরে কাঁদতে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পর লন্ডন থেকে বড় ছেলে তারেক রহমান মাকে ফোন করেন। কোকোর মৃত্যুর খবর শুনে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা সমবেদনা জানাতে খালেদার গুলশানের বাসায় যান। কিন্তু খালেদার ঘরের দরজা বন্ধ থাকায় কেউই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি।
পরে তাঁর বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস গণমাধ্যমকে জানান, তাঁকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। কোকোর মৃত্যুতে তার শোকাহত মা খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে তাঁর বাসায় গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাত ৮টা ৩৬ মিনিটে তিনি খালেদার গুলশান অফিসের সামনে পৌঁছান। কিন্তু অফিসের গেট ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় তিনি সেখানে সাত-আট মিনিট অপেক্ষা করে ফিরে আসেন। হাসিনা যখন গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন সেখানে বিএনপির কোনো নেতা বা খালেদার ব্যক্তিগত কোনো কর্মকর্তা হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন না। এ সময় হাসিনার সঙ্গে ছিলেন আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও দীপু মনি। হাসিনা ফিরে যাওয়ার পর তাঁর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, 'এভাবে দরজা বন্ধ করে রাখা ভদ্রজনোচিত নয়। প্রধানমন্ত্রী একজন মা হিসেবে সমবেদনা জানাতে এসেছিলেন। এর মধ্যে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু গেট খোলা হয়নি।' খালেদার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী অফিসের গেটে এসেছেন এটা শুনে তিনি দৌড়ে গেটের কাছে চলে আসেন। কিন্তু তার আগেই প্রধানমন্ত্রী সেখান থেকে চলে যান। তিনি বলেন, 'আশা করি আওয়ামী লীগ বিষয়টি নিয়ে নোংরা রাজনীতি করবে না। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীকে সময় দেওয়া হবে।'
রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান গুলশান অফিসে সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে আসার জন্য রাতে ঘুম থেকে জেগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। মারুফ কামাল বলেন, খালেদা জিয়া মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যয়ের মধ্যে আছেন। তিনি শোকার্ত ও অসুস্থ। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল। ঘুম থেকে জেগে উঠে যখন তিনি জানলেন প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানাতে এসেছিলেন, তখন তিনি তাঁর আসার জন্য ধন্যবাদ জানান। খালেদা জিয়া বলেছেন, যখন তিনি আসতে চাইবেন, তখন তাঁকে স্বাগত জানানো হবে। মারুফ কামাল বলেন, 'আপনারা জানেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুতে খালেদা জিয়া সমবেদনা জানাতে ছুটে গিয়েছিলেন। এটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়।
একই দিন ঢাকার যাত্রাবাড়ী কাঠেরপুল এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়েছে। এর আগে ২০ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার নির্দেশে মানুষ খুন করা হচ্ছে। তাঁকে হুকুমের আসামি করা যুক্তিযুক্ত। এরপর এই প্রথম বিএনপির ডাকা অবরোধ সংশ্লিষ্ট কোনো মামলায় খালেদা জিয়াকে আসামি করা হলো।
উল্লেখ্য যে, ২৪ জানুয়ারি কোকোর মৃত্যুর দিন যাত্রাবাড়ী কাঠেরপুল এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে দুর্বত্তরা। এতে ২৮ জন দগ্ধ ও আরও কয়েকজন আহত হয়। কারা বাসে আগুন দিয়েছে সে ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি।"
Title | খালেদা |
Author | মহিউদ্দিন আহমদ, Mohiuddin ahamod |
Publisher | অনন্যা |
ISBN | 9789849930662 |
Edition | |
Number of Pages | 542 |
Country | Bangladesh |
Language | Bengali, |
0 Review(s) for খালেদা