কূটনীতির অন্দরমহল(হার্ডকভার)
400gram
SKU: OOFAC0R
ভূমিকা
কূটনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ ডিপ্লোম্যাসি’র উদ্ভব ঘটেছে প্রাচীন গ্রিক শব্দ থেকে। কূটনীতি শব্দটি ১৭৯৬ সালে অ্যাডমন্ড বার্ক প্রচলিত ফরাসি শব্দ ফরঢ়ষড়সধঃরব থেকে প্রচলন হয়। ফরাসি কূটনীতিক চার্লস মাউরিস দ্য ট্যালেয়ার্যান্ড-পেরিগোর্ডকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ একজন কূটনীতিক ভাবা হয়। তবে গ্রিক ডিপ্লোমা শব্দটি থেকে ডিপ্লোম্যাসি শব্দটির সৃষ্টি বলে ধারণা করা হয়। ডিপ্লোমা শব্দটি গ্রিক ক্রিয়াশব্দ ‘ডিপ্লোন’ থেকে এসেছে। ‘ডিপ্লোন’ মানে হচ্ছে ভাঁজ করা। ফ্রান্সে ১৭ শতক থেকে বিদেশে অবস্থানকারী বাণিজ্যিক ও সরকারি প্রতিনিধি দলকে কূটনৈতিক দল বলা শুরু হয়। কূটনীতি হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিদ্যার একটি শাখা, যেখানে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক চুক্তি বা আলোচনা সম্পর্কিত কলা কৌশল অধ্যয়ন করা হয়। সাধারণ অর্থে কূটনীতি হচ্ছে কোন রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিচালিত সরকারি কার্যক্রম। পর্যটক অ্যান্থনি শার্লে মনে করেন, বিশ্বে পারস্য শাসকরাই প্রথম ইউরোপে (১৫৯৯-১৬০২) পারস্য দূতাবাস খুলেছিল। বাংলা কূটনীতি শব্দটি সংস্কৃত শব্দ ‘কূটানীতি’ থেকে আগত। প্রথম মৌর্য্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের উপদেষ্টা চাণক্যর (কৌটিল্য হিসেবেও পরিচিত) নাম থেকে ‘কূটানীতি’ শব্দটির উদ্ভব। একটি রাষ্ট্র কেমন তার ওপর নির্ভর করে সেই রাষ্ট্রের কূটনীতির ধরন। বাংলাদেশ হলো ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা, অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আন্তর্জাতিক আইনের ও জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা এই সকল নীতি হবে রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি এবং এই সব নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র: (ক) আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তিপ্রয়োগ, পরিহার এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জন্য চেষ্টা করবেন; (খ) প্রত্যেক জাতির স্বাধীন অভিপ্রায়-অনুযায়ী পথ ও পন্থার মাধ্যমে অবাধে নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারণ ও গঠনের অধিকার সমর্থন করবেন; এবং (গ) সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ বা বর্ণ বৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে সমর্থন করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাইকেল করগ্যান একজন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ। তবে তার বিশেষায়িত জ্ঞান রয়েছে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের কূটনৈতিক উৎকর্ষ বৃদ্ধির বিষয়ে। একটি ছোট্ট দেশের নাম আইসল্যান্ড। লোকসংখ্যা মাত্র সোয়া তিন লাখ, আয়তনে ৩৯,৭৭০ বর্গমাইল। কিন্তু পেশাগত কূটনৈতিক জ্ঞান অর্জন করে তারা বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছে। আইসল্যান্ড তাই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের কূটনীতির এক মডেল। আইসল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার ফর স্মল স্টেট স্টাডিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মি. করগ্যান তার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। মার্কিন নৌ একাডেমীর স্নাতক করগ্যান নৌবাহিনীতে ২৫ বছর চাকরি করেন। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র ছিল ন্যাটো সম্পর্কিত। ১২ আগস্ট ২০০৮ তিনি এক নিবন্ধে লিখেছেন, কয়েক বছর আগে কাউন্সিল অব ইউরোপের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ এলো বিশ্বের অন্যতম লিলিপুট রাষ্ট্র মাল্টার সামনে। লোকসংখ্যা সোয়া চার লাখ। তো এই মাল্টা যখন ওই আমন্ত্রণ পেলো তখন তাদের কূটনীতিকরা মহা বিপদে পড়লেন। ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করলেন, কী করে এত বিশাল কাজ তারা সামলাবেন। তারা যদি তাদের সমস্ত কূটনৈতিক সার্ভিসকে এই কাজে ব্যস্ত রাখেন তাহলেও যতো লোকবলের দরকার পড়ে তার মাত্র অর্ধেকটাই পূরণ হয়। ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের সামনে বাস্তবতা হলো, সে যতোই ঘরের কোণে মুখ লুকিয়ে থাকতে চাক না কেন, বিশ্বায়ন ও বৈশ্বিক রাজনীতির ক্রম সম্প্রসারণশীল প্রভাব থেকে তার পুরোপুরি মুক্তি নেই। আঞ্চলিক বা বিশ্বশক্তির উপরে তার তেমন কোনও প্রভাব না থাকতে পারে। কিন্তু কূটনীতির ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলো সমরাস্ত্র দিয়ে যা পারে না কিংবা সেটা পারার কোনও প্রশ্নই আসে না, তদুপরি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চেয়ে বেশি কিছু করতে পারে। এজন্য তার হাতে থাকে আরেকটি অস্ত্র। আর সেটি হলো শাণিত কূটনীতি। এটির যথাযথ ও দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে সে নিজের মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারে। বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চেও তার প্রভাব এমনকি হতে পারে ‘স্পষ্টত বোধগম্য’। কিন্তু সেটা কিভাবে হতে পারে? সাধারণত বলা হয় পররাষ্ট্রনীতি আর কিছুই নয়, এটি আসলে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির একটি বর্ধিতাংশ। বাংলাদেশের অস্থির, ভঙ্গুর গণতন্ত্র ও রাজনীতি মনে রাখলে তার বৈদেশিক নীতির দোদুল্যমান অবস্থা আঁচ করে নিতে খুব কষ্ট হয় না। বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও তার ভৌগোলিক অবস্থানই বাংলাদেশ কূটনীতির জন্য এক অপ্রতিরোধ্য বিভাজন রেখা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের কেউ কেউ মনে করেন ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের সামনে দুটো বিকল্প থাকে। বড়ো শক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা কিংবা কিউবা বা উত্তর কোরিয়ার মতো ‘শজারু’ হয়ে থাকা। বিশ্বায়নের আগে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তপস্বীর মতো দিন কাটানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু সে যুগ হয়েছে বাসি। গুগল আর্থ আজ বিশ্বের প্রত্যেক নাগরিক ও স্থানের চিত্ররূপ আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। সম্ভবত সে কারণেই বিশ্বের দেশে দেশে বিভিন্ন ধরনের আঞ্চলিক জোট ও সংস্থা নানাভাবে বেড়েই চলেছে। সার্ককে ঘিরে অবশ্য এখনও তেমন প্রায় কিছুই গড়ে উঠেনি। কিন্তু আসিয়ানকে ঘিরে ইতিমধ্যে নানা ধরনের প্রভাবশালী সংস্থার উšে§ষ ঘটেছে। সে সব সংস্থার অনেকগুলোই আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যেও সীমাবদ্ধ নেই। তামাম দুনিয়ার বৃহৎ শক্তিগুলো আজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসিয়ানের আর্শিতে মুখ দেখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। জার্মানির ওয়েস্টফেলিয়ার শান্তিচুক্তি বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ১৬৪৮ সালে সম্পাদিত এই চুক্তি হোলি রোমান অ্যাম্পায়ারের ত্রিশ বছরের (১৬১৮-১৬৪৮) এবং স্পেন ও ডাচ্দের মধ্যকার আশি বছর (১৫৬৮-১৬৪৮) দীর্ঘ যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিল। বন্দুকের নল নয়, কূটনীতিই শান্তি বয়ে এনেছিল। আজ আমরা বিশ্বের রাষ্ট্রের যে কাঠামো দেখছি সেজন্য সপ্তদশ শতাব্দীর ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র ভেনিসের কূটনীতিকদের অবদান অপরিসীম।
Title | কূটনীতির অন্দরমহল(হার্ডকভার) |
Author | মতিউর রহমান চৌধুরী, Motiur Rahman Chowdhury |
Publisher | সূচীপত্র |
ISBN | 9789848557129 |
Edition | 2nd, 2013 |
Number of Pages | 240 |
Country | Bangladesh |
Language | Bengali, |
0 Review(s) for কূটনীতির অন্দরমহল(হার্ডকভার)