এই বইটি লেখক কর্তৃক রচিত “The Art of Investing in the Stock Market” এর বাংলা অনুবাদ। বইটি ইংরেজিতে রচিত ও প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই এর বঙ্গানুবাদের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছিল। কারণ অনেক বিনিয়োগকারীর পক্ষে ইংরেজিতে বইটি যথাযথভাবে অনুধাবন করা সম্ভব নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে বইটি রচনার উদ্দেশ্য বহুলাংশেই ব্যাহত হবে। তবে ভাষান্তরের কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এজন্য ক্ষেত্র বিশেষে অল্প কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় ভাষার সাবলীলতা রক্ষা ও পাঠকের সহজ বোধগম্যতা একটি প্রধান বিবেচ্য বিষয়। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বিষয়ে একটি বই রচনা করা আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ও পরিকল্পনা ছিল- যা অবশেষে মহান আল্লাহ্ তা’য়ালার ইচ্ছায় সম্পন্ন হলো। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীগণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিবিধ সমস্যা ও দোটানায় ভোগেন, বিশেষ করে পুঁজিবাজার ধসের সময় তাদের সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের নানাবিধ সমস্যা, বিশেষ করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সমস্যা, সীমাবদ্ধতা এবং কীভাবে তা লাঘব করা যায়Ñ সে বিষয়টি এই পুস্তক রচনার ক্ষেত্রে প্রধান অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে। পুঁজিবাজার মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় সৃষ্ট একটি বিনিয়োগ মাধ্যম। মানব সমাজের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায় পুঁজিবাজারও একটি জটিল বিষয়। কারণ পুঁজিবাজার অর্থনীতির বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় দ্বারা প্রভাবিত। এছাড়া মানুষের আচরণগত সীমাবদ্ধতা ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রবণতা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। বিভিন্ন সময়ে পুঁজিবাজারের ব্যাপক দরপতন তথা ধসের কারণে বাজার পরিস্থিতি ও বিনিয়োগকারীদের দুর্বিষহ অবস্থা প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। ছোট-বড় সকল পর্যায়ের বিনিয়োগকারী তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ হারিয়েছেন। অনেকে সম্পত্তি বিক্রয়লব্ধ অর্থ বিনিয়োগ করে সর্বস্ব হারিয়েছেন। বিশেষ করে যারা বিনিয়োগে ঋণের অর্থ ব্যবহার করেছেন তাদের অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল। এমনকি অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ভবিষ্যতে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের উচিত অনুরূপ পরিস্থিতি প্রতিহত করা। পুঁজিবাজার হচ্ছে তালিকাভুক্ত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীসমূহে বিনিয়োগের একটি মাধ্যম। জনগণের একটি ক্ষুদ্র অংশ অন্যান্য সঞ্চয় প্রকল্পের চেয়ে বেশি মুনাফা লাভের আশায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে থাকেন। প্রত্যাশিত মুনাফা বেশি হলে তার সাথে তাল মিলিয়ে ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার বিনিয়োগে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তুলনামূলকভাবে সফল বিনিয়োগকারীর সংখ্যা, বিশেষ করে যারা যথেষ্ট মুনাফা অর্জন করেন, তাদের সংখ্যা খুবই কম। বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর মধ্যে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত জ্ঞানের, যুক্তিযুক্ত চিন্তা ও ধৈর্যের অভাব পরিলক্ষিত হয়। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য অর্থায়ন নীতির মৌলিক বিষয়গুলো জানা উচিত। হিসাব বিজ্ঞান সংক্রান্ত কিছু মৌলিক জ্ঞানও আবশ্যক। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা এসব সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান রাখেন, পুঁজিবাজার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তারা বেশ কিছুটা সুবিধা ভোগ করেন। তবে যাদের নিকট অর্থায়ন নীতি ও হিসাব বিজ্ঞান নতুন বিষয় তারাও চেষ্টা করলে সহজেই সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে মৌলিক জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হবেন। পুঁজিবাজার বিনিয়োগে সফল হওয়ার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা ও অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। এটা সকলের জন্যই প্রযোজ্য। যথাযথভাবে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিষয়ে জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরাও বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে অবহেলা ও শৃঙ্খলা মেনে না চলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন। প্রায় সকল বিনিয়োগকারীই কোন না কোন পেশায় নিয়োজিত। কাজেই পুঁজিবাজার সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন ও গবেষণা করার জন্য যথেষ্ট সময় তাদের হাতে নেই। এই বইটি মূলত ব্যস্ত মানুষ এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য রচনা করা হয়েছে। অন্ততঃপক্ষে এই বইটি একটি ভিত্তি হিসাবে কাজ করবে, যার উপর দাঁড়িয়ে আরো বিস্তারিত জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব হবে। সকল পর্যায়ের বিনিয়োগকারীগণ এই বইয়ের মাধ্যমে উপকৃত হবেন। অনেক জ্ঞানী গুণীজনও পুঁজিবাজারে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছেন। সফল বিনিয়োগকারীগণকে উচ্চশিক্ষিত শ্রেণী থেকেই হতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। সাধারণ জ্ঞানের ব্যবহার, সিদ্ধান্ত গ্রহণে যুক্তিযুক্ত চিন্তা ভাবনা, লোভ এবং আশংকার উপর নিয়ন্ত্রণ, সর্বোপরি ধৈর্য ও শৃংখলা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সাফল্যের চাবিকাঠি। এই পুস্তকের উন্নয়নের জন্য সকল পাঠককে তাদের পর্যবেক্ষণ/পরামর্শ ইমেইল (ভধৎঁয়যধয়ঁব@ুধযড়ড়.পড়স)-এর মাধ্যমে প্রেরণ করতে অনুরোধ করা হলো। বিভিন্ন লাইব্রেরীতে এবং ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইটে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বিষয়ে অনেক বই রয়েছে। এই বইয়ের গ্রন্থপঞ্জীতে এমন কিছু বই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে উৎসাহী পাঠকগণ সেগুলো অধ্যয়ন করতঃ পুঁজিবাজার বিনিয়োগ বিষয়ে আরো বেশি জানতে পারেন। পুঁজিবাজার বিনিয়োগ বিষয়ে অনেক প্রকাশিত পুস্তক থাকার পরও নতুন পুস্তকের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। উক্ত পুস্তকসমূহের বেশিরভাগের আকারে বড় এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তবে অধিকাংশ পুস্তকের দুর্বল দিকটি হলো, ব্যবহারিক এবং কার্যকর নির্দেশনার অভাব। এই বইটি তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত আকারে লিখা হলেও কার্যকর ও ব্যবহারিক নির্দেশনা স্পষ্ট আকারে বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়া বিনিয়োগে মুনাফা অর্জনের কৌশলসমূহের উপর জোর দেয়া হয়েছে। এই বই রচনার ক্ষেত্রে আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতির বিষয়টি খেয়াল রাখা হয়েছে। কিছু মৌলিক অর্থায়ন নীতি যা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য প্রয়োজনÑ তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ দিকটিও এই বইয়ের বিশেষত্ব। এছাড়া পুঁজিবাজার ধসের ওপর একটি অধ্যায় যোগ করা হয়েছে যা সাধারণভাবে অন্যান্য বইতে অনুপস্থিত। পুঁজিবাজারে ধসের ওপর অধ্যায়ন ও পর্যালোচনা বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্ত পরিহারের জন্য একটি বড় হাতিয়ার। সফল বিনিয়োগকারীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ৮ জনের বিনিয়োগ নীতিমালা ও কৌশল সম্বলিত একটি অধ্যায় রয়েছে। সফল বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ কৌশলে যেমন মিল লক্ষ্য করা যায় তেমনি ভিন্নতাও লক্ষ্যণীয়। সফল বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে অবগত হওয়া একজন বিনিয়োগকারীর মননশীলতা ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে দক্ষতা অর্জনে সহায়ক হবে। বিভিন্ন ব্রোকার হাউজের ব্যবস্থাপক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে আমি উপকৃত হয়েছি। এছাড়া বিভিন্ন সময়, সকল পর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের সাথে নানাবিধ আলাপচারিতার মাধ্যমে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমি তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি কতিপয় ব্যক্তিবর্গের উল্লেখ করছিÑ তাদের উৎসাহ, সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণার জন্য। তাদের মধ্যে ড. মোঃ আকিব উল হক, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ডা. মোহাম্মদ শামসুল আলম, এমএস, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং নাসরিন আক্তার, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা কলেজ-এর নাম উল্লেখ্য। বইটি রচনার সময় আমার পরিবারের (স্ত্রী ও দুই সন্তান) সদস্যগণ ইতিবাচক মন্তব্যের মাধ্যমে উৎসাহ জুগিয়েছেন। বশির আলী এই পুস্তকটি মুদ্রণ এবং বারবার সংশোধনের কাজে অনেক পরিশ্রম করেছেন। আমি তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই বইটি মূলত বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে কেন্দ্র করে রচিত হলেও পৃথিবীর যে কোন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়ক হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন পুঁজিবাজারের মধ্যে স্বাতন্ত্র্য তথা ভিন্নতা আছে। তবে তা বিভিন্ন মৌলিক ক্ষেত্রে অভিন্ন বৈশিষ্ট্যের তুলনায় অনেক কম। বইটি বাংলা ভাষায় রচনার সময় যথাসম্ভব ইংরেজি শব্দ পরিহার করা হয়েছে। তবে পাঠকদের সহজ বোধগম্যতা বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় হয়েছে। সর্বোপরি এই পুস্তকের সাফল্য প্রধানত নির্ভর করবে, যাদের জন্য এটি লেখা হলো তাদের কতটুকু কাজে লাগল তার উপর। পুঁজিবাজারের জটিল পথে আমি সকল বিনিয়োগকারীর সাফল্য কামনা করি।
Title | পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ কৌশল |
Author | মোঃ ফারুক উল হক, Md Faruk Ul Hoq |
Publisher | কারুবাক, Karubak |
ISBN | 978984938709 |
Edition | 1st Published, 2021 |
Number of Pages | 96 |
Country | Bangladesh |
Language | Bengali, |
0 Review(s) for পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ কৌশল