ভূমিকা
ভালবাসি মাতৃভাষা। বাঙালি জাতি হিসেবে রক্ত দিয়ে অর্জন করেছি ভাষার অধিকার। রক্ত দিয়ে পেয়েছি স্বাধীনতা। ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামও সফল করেছি। বারবার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে এদেশের মানুষ। আসলে মনে একটা প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসে, সেটা হল – কি অপরাধ করেছে বাংলার মানুষগুলো যে, যারা বার বার বঞ্চনার শিকার হয়? কি অপরাধ তাদের? কেন তারা দু'চোখ ভরে স্বপ্ন দেখতে পারবে না? সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে না? শান্তিতে জীবন কাটাতে পারবে না? যখনই কেউ তাদের হয়ে কাজ করবে তখনই তাকেও ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হবে।
আমি যখন আমার দেশের মানুষের কথা ভাবি, ব্যথায় আমার বুক ভেঙে যায়। তাদের দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা আমি মরমে উপলব্ধি করি। দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার স্বপ্ন নিয়ে দীর্ঘ চব্বিশটি বছর সংগ্রাম করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। স্বাধীন জাতির স্বাধীন স্বত্ত্বার উপর তিনি এদেশকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরাজিত শক্তি ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার আর বারবার আঘাত করে দেশকে পিছিয়ে নিচ্ছে। যখনই আমরা সংগ্রাম করে, লড়াই করে এগোতে চেষ্টা করছি, হয়তো একটু এগোচ্ছি। এবং এদেশের দু:খী, সাধারণ মানুষ নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে, তখনই আবার আঘাত এসেছে। বাঙালি জাতিকে কি যুগ যুগ ধরে বার বার সংগ্রাম করেই যেতে হবে?
আমি লেখক নই, প্রবন্ধকার নই, দেশকে ভালবাসি, দেশের মাটি ও মানুষকে ভালবাসি। মানুষের জন্য প্রাণের টানে কাজ করে যাচ্ছি। আমি চাই আমাদের দেশের মানুষ সুন্দর জীবন-যাপন করুক। শান্তিতে বসবাস করবে, উন্নত জীবন পাবে। সুখ, শান্তি সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে বাংলাদেশ। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যখনই কোন বিষয় নজরে এসেছে চেষ্টা করেছি কলম ধরতে। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলন করেছি। পাঁচ বছর সফলভাবে দেশ পরিচালনা করে মানুষকে নতুনভাবে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলাম, সেটাই আমাদের সার্থকতা । কিন্তু দু:খের বিষয়, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
এমনি পরিস্থিতিতে ২১শে ফেব্রুয়ারি, যে দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছে ১৯৯৯ সালে। আজ সমগ্র বিশ্ব পালন করছে এ দিবসটি। বিশ্বে মাতৃভাষা সংগ্রহ ও সংরক্ষণের দায়িত্ব বাংলাদেশের। তাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলারও প্রকল্প আওয়ামী লীগ সরকার গ্রহণ করে এবং জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনান আমার
বিপন্ন গণতন্ত্র লাঞ্ছিত মানবতা
আমন্ত্রণে ঢাকায় আসেন এবং তাঁর উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট-এর ভিত্তি-প্রস্তর স্থাপন করেছি এ মহান দায়িত্ব পালনের জন্য। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে আমাদের রয়েছে গৌরবের ইতিহাস। কিন্তু পরাজিত শক্তির দোসররা ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্রে অব্যাহত রয়েছে। এই বিকৃত ইতিহাস জাতির উপর চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা এঁটেছেন এদেশেরই কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ। বাঙালির বিজয় এরা মেনে নিতে পারে না বলেই বার বার আঘাত হানে। ষড়যন্ত্র করে, চক্রান্তের বেড়াজাল ফাঁদে। আর এদেশের মানুষ হারায় তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, হারায় উন্নত জীবনের স্বপ্ন।
আজ আবার এদেশের গণতন্ত্র বিপন্ন। ১ অক্টোবর ২০০১ সালের নির্বাচনে যে গভীর চক্রান্ত জনগণের ভোটের রায় কেড়ে নিয়েছে ব্যাপক কারচুপি করে এবং নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাস, অত্যাচার, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, দখল, চাঁদাবাজী মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। অত্যাচারিত হয়েছে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী, অত্যাচারিত হয়েছে অগণিত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী, ভোটার। পাশবিক অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে নয় বছরের মল্লিকা থেকে সীমা, জোহরা, পূর্ণিমা, ৫০ বছরের বৃদ্ধাসহ হাজার হাজার মহিলা। মানবতার এত বড় অপমান, নির্বাচনের পর যা ভাষায় বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। জনগণের ভোটে সত্যিকারভাবে জয়ী হলে কি মানবতাকে এভাবে লাঞ্ছিত হতে হত? ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছিল সত্যিকারভাবে। জনগণের ভোটেই জয়ী হয়েছিল বলেই প্রতিহিংসা পরায়ণ হয় নাই। হবার প্রয়োজনও মনে করে নাই। কারণ আত্মবিশ্বাস ছিল। জনগণের উপর আওয়ামী লীগের প্রচণ্ড বিশ্বাস রয়েছে। তাই আজ দেখি গণতন্ত্র বিপন্ন বিপর্যস্ত। মানবতা ভুলুণ্ঠিত লাঞ্ছিত ।
এমতাবস্থায় চেষ্টা করেছি আমার অনুভূতি ব্যক্ত করতে। কতটুক পাঠকের মনকে নাড়া দেবে আমি তা জানি না। তবে আমার প্রচেষ্টা হল সত্য ঘটনাগুলো পাঠকের কাছে তুলে ধরতে। বিচারের ভার প্রিয় পাঠকের উপর ছেড়ে দিলাম।
বই ছাপার দায়িত্ব প্রকাশক ওসমান গনি নিয়েছেন এই কঠিন সময়ে। তাঁকে ধন্যবাদ জানাই এই সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য। বই ছাপা, প্রচ্ছদ, বাঁধাইসহ সকল কাজে যারা নিয়োজিত তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই
লেখা ও তথ্য সংগ্রহে কোন ভুল থাকলে কোন পাঠক যদি তা সংশোধন বা
সংযোজন করার জন্য পাঠান, কৃতজ্ঞ থাকব। তাতে আমার লেখা আরও সমৃদ্ধ
হবে বলে মনে করি
পাঠকের কাছে এ বই সমাদৃত হলেই নিজেকে সার্থক মনে করব।
শেখ হাসিনা
১ ফেব্রুয়ারি ২০০২
Title | বিপন্ন গণতন্ত্র লাঞ্ছিত মানবতা |
Author | শেখ হাসিনা, Sheikh Hasina |
Publisher | আগামী প্রকাশনী |
ISBN | |
Edition | 3rd Edition : February , 2020 |
Number of Pages | 88 |
Country | Bangladesh |
Language | Bengali, |
0 Review(s) for বিপন্ন গণতন্ত্র লাঞ্ছিত মানবতা