দ্বিতীয় সংস্করণের মুখবন্ধ
বর্তমান গ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ যখন ১৯৮৬ সনে প্রকাশিত হয়েছিল তখন মুখবন্ধে বলা হয়েছিল যে, এতে প্রধানত ১৯১৯ সন থেকে ১৯৬৯ সন পর্যন্ত অর্ধশতাব্দীব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং সেই সাথে আশির দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিশেষ বিশেষ ব্যাপারে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তা একটি ক্রোড়পত্রে সন্নিবেশিত হয়েছে। কিন্তু আশির দশক শেষ হবার পূর্বেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অতি দ্রুত এমন বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়, যা এর অল্প কয়েকদিন পূর্ব পর্যন্ত ছিল সম্পূর্ণ অচিন্ত্যনীয়। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে দীর্ঘকাল যাবৎ দুটো পরস্পরবিরোধী পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চলতে থাকা ঠাণ্ডা লড়াইয়ের হঠাৎ অবসান। প্রায় একই সাথে পূর্ব ইউরোপের বিশাল এলাকা জুড়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের যে সাম্রাজ্য ছিল তার উপর সে পরাশক্তিটির নিয়ন্ত্রণ দূর হয়ে যায় যখন সেখানকার সকল দেশে একযোগে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ঢেউ বয়ে যায়। এর মধ্যে পূর্ব জার্মানিও অন্তর্ভুক্ত। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, সে দেশটি যে শুধু সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তিলাভ করেছে তাই নয়, পরাশক্তিদ্বয়ের মধ্যে চলতে থাকা ঠাণ্ডা লড়াইয়ের অন্যতম উত্তেজনাপূর্ণ এলাকা হিসেবে যে জার্মান সমস্যা বিরাজ করছিল, দুই জার্মানির একত্রীকরণের মধ্য দিয়ে সে সমস্যাটিরও সমাধান হয়। এখানেও সোভিয়েত স্বার্থ প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কারণ একীভূত জার্মানি তার বিরুদ্ধে পরিচালিত পশ্চিমা মৈত্রীজোট ন্যাটোর সদস্য হিসেবে বহাল থাকে। এর কিছুদিন পর খোদ সোভিয়েত ইউনিয়নেই ভাঙনের সৃষ্টি হয় এবং তার প্রাক্তন প্রজাতন্ত্রসমূহ একে একে স্বাধীনতা লাভ করতে থাকে। এ ভাঙন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবার পর প্রাক্তন সোভিয়েট ইউনিয়নের উত্তরাধিকারী দেশ রাশিয়ার শক্তি ও সামর্থ্য অনেকটা হ্রাস পায় যার ফলে সে বিশ্বের বুকে বর্তমান একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারকারী প্রবল পরাক্রমশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম নয়। এভাবে বিশ্বব্যাপী শক্তিসাম্য ব্যবস্থায় যে গুণগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে তার প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও পড়তে বাধ্য। কিন্তু এখনও তা কী রূপ
ধারণ করবে তা সম্পূর্ণ স্পষ্ট না হলেও গ্রন্থখানির দ্বিতীয় সংস্করণে এ সকল বিষয়ে। কিঞ্চিৎ আলোকপাত করা হয়েছে।
এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক পরিসরে সাম্প্রতিককালে অসংখ্য বিক্ষিপ্ত ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যেগুলোর বিবরণ দেয়া এখানে সম্ভব হয়নি। তবু একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিরস্ত্রীকরণে কী অগ্রগতি সাধিত হয়েছে এবং একই সাথে বিশ্বের অন্যতম জটিল সমস্যাএলাকা হিসেবে চিহ্নিত মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘকাল যাবৎ সহিংস অবস্থা বিরাজ করার পর সেখানে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত পিএলও-ইসরাইল চুক্তি সম্পর্কেও কিছুটা ধারণা প্রদান করা হয়েছে।
বর্তমান সংস্করণটিতে যে সকল নতুন বিষয় যোগ করা হয়েছে সেগুলো লেখার ব্যাপারে আমার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী জনাব এহসানুল হক আমাকে বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ ও পরামর্শ দান করে বিশেষভাবে সাহায্য করেছেন। এজন্য আমি তাঁর নিকট কৃতজ্ঞ। আমার স্নেহভাজন ছাত্র সৈয়দ নুরুল্লাহ আজাদ কয়েকটি নিবন্ধ এবং কিছুসংখ্যক ফটো ও ম্যাপ জেরক্স করে দিয়ে আমাকে সহায়তা করেছে। এজন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। ঢাকাস্থ মার্কিন তথ্য সরবরাহ কেন্দ্র থেকেও আমি কয়েকটি দুষ্প্রাপ্য ছবি পেয়েছি যা সংযোজনের ফলে গ্রন্থটির মান নিঃসন্দেহে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য আমি এ কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিকট আমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
আমার বলতে দ্বিধা নেই যে, ব্র্যাকের সহযোগিতা না পেলে এ গ্রন্থটির দ্বিতীয় সংস্করণ বের করা হয়তো আমার পক্ষে সম্ভব হত না। অধিকন্তু এ জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রকাশনার সাথে জড়িত সকল কর্মী যে নৈপুণ্য সহকারে অতি দ্রুত সকল কাজ সম্পন্ন করেছেন সেজন্য তাঁদের সকলেই আমার ধন্যবাদার্হ হয়েছেন। পরিশেষে এ সংস্করণটি প্রকাশের জন্য যিনি আমাকে সর্বদা তাগিদ দিয়ে এবং ব্র্যাকের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে সাহায্য করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থ সংস্থার ব্যবস্থাপক সেই শঙ্কর ভট্টাচার্যকে আমি আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুলাই ১৯৯৫
মোঃ আবদুল হালিম
Title | আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (হার্ডকভার) |
Author | মো: আবদুল হালিম, Md. Abdul Halim |
Publisher | মাওলা ব্রাদার্স |
ISBN | 9844103010 |
Edition | July 2023 |
Number of Pages | 336 |
Country | Bangladesh |
Language | Bengali, |
0 Review(s) for আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (হার্ডকভার)