বনলতা সেন
আপাত দৃষ্টিতে 'বনলতা সেন' একটি প্রেমের কবিতা যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বনলতা সেন নাম্নী কোনো এক রমণীর স্মৃতি রোমন্থন। শুরু থেকেই পাঠকের কৌতূহল বনলতা সেন কী বাস্তবের কোনো নারী নাকি সম্পূর্ণ কল্পিত একটি কাব্যচরিত্র। এ কবিতার তিনটি স্তবকের প্রতিটির শেষ চরণে বনলতা সেন নামের এক নারীর উল্লেখ আছে।
প্রথম স্তবকের শেষ চরণ "আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন";
দ্বিতীয় স্তবকের শেষ চরণ "পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন", এবং
তৃতীয় স্তবকের শেষ চরণ "থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন"।
বনলতা সেন ছাড়াও জীবনানন্দের কাব্যে বেশ কিছু নারী চরিত্রের উপস্থিতি আছে যেমন শ্যামলী, সুরঞ্জনা, সুচেতনা, সরোজনী, শেফালিকা বোস, সুজাতা ও অমিতা সেন। তবে ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে লিখিত এবং প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল অন্তরালবাসী কারুবাসনা নামক উপন্যাসে প্রথম 'বনলতা সেন' নামটি পাওয়া যায়। অধিকন্তু 'হাজার বছর ধরে খেলা করে', 'একটি পুরোনো কবিতা' এবং 'বাঙালি পাঞ্জাবী মারাঠি গুজরাটি' শীর্ষক আরও তিনটি কবিতায় এ নামটি আছে। কারুবাসনা উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে, কবির মৃত্যুর বহুক্কাল পর। এর ভাষা-ভঙ্গিতে অনবগুণ্ঠিত আত্মজৈবনিকতা সেকালের পাঠক মনে বিশেষ কৌতূহলের উদ্রেক করেছিল।
'বনলতা সেনে'র 'কবিতা ভবন থেকে প্রকাশিত প্রথম সংস্করণ বনলতা সেন রক্ত মাংসের কোনও মানবী না-কি নিছকই কল্পিত কোনও কবিতাশ্রিত নারী এ প্রশ্নটি অবসিত না-হলেও রহস্যের কিনারা হয়েছে কিছু। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে জীবনানন্দের পাণ্ডুলিপি উদ্ধারক ডা: ভূমেন্দ্র গুহ কবির 'লিটেরেরি নোটস' গবেষণা করে জানিয়েছেন যে কবির জীবনে প্রেম এসেছিল সন্দেহ নেই। দিনলিপি বা লিটেরেরি নোটস-এ ওয়াই (Y) হিসেবে উল্লিখিত মেয়েটিই কবির কাঙ্ক্ষিত নারী। বাস্তবে সে শোভনা কবির এক কাকা অতুলান্ত দাশের মেয়ে যার ঘরোয়া নাম বেবী। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে লাবণ্য দাশকে বিয়ের আগেই এই বালিকার প্রতি যুবক জীবনানন্দ গভীর অনুরাগ অনুভব করেছিলেন। একটি উপন্যাসে শচী নামেও একে দেখতে পাওয়া যায়। শোভনাকে নিয়ে জীবনানন্দের অনুরাগ উন্নীত হয়েছে
অনুক্ত প্রেমে, লাবণ্য দাশের সঙ্গে দাম্পত্যজীবন আদৌ সুখকর না-হওয়ায় এই প্রেম তীব্রতর হয়ে ক্রমশ এক প্রকার অভিভূতিতে পর্যবসিত হয়েছিল। [২] কাঠামো এবং রচনা কৌশল নাতিদীর্ঘ আঠারো পঙ্ক্তির নিরেট স্থাপত্যের এই গীতিকবিতায় রয়েছে ছয় পঙ্ক্তির তিনটি স্তবক। প্রথম স্তবকে কবি মূলত নিজের কথা বলেছেন; দ্বিতীয় স্তবকে বলেছেন এক ঝলক দেখা প্রিয় মুখের কথা এবং তৃতীয় স্তবকে বলেছেন একটি স্বপ্নের কথা। কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের প্রিয় ছন্দ
অক্ষরবৃত্ত বা পয়ারে রচিত। তবে পর্ব বিন্যাসে সমতা রক্ষা করা হয় নি। প্রথম স্তবকের প্রতি পঙ্ক্তি তিন পর্বের, যার মাত্রা বিন্যাস ৮৮ ৬। ৮ মাত্রার একটি পর্ব মধ্যভাগে থাকার কারণে এ স্তবকের ছন্দবিন্যাসকে মহাপয়ার পর্যায়ী বলা যায়।
দ্বিতীয় স্তবকে বিভিন্ন পঙ্ক্তির পর্ব বিন্যাস বিভিন্ন; যেমনঃ ৮৮২, ৪৮ ১০; ৮ ৬, ৮৮ ১০, ৮৪৪ ১০ এবং ৮৪ ১০।
তৃতীয় স্তবকের পর্ব ও মাত্রা বিন্যাস এরকমঃ ৮ ১০, ৪৮ ৬, ৮৪ ১০; ৮ ১০; ৮৪ ৮৬ এবং ৮৮ ৬, পয়ারে বা অক্ষরবৃত্তের এরূপ সূত্রহীন ব্যবহার সত্ত্বেও কবিতাটির সঙ্গীতময়তা অতুলনীয়। এ কারণে অনুমিত হয় যে শব্দবিন্যাস এদিক-সেদিক করে কবিতাটির সঠিক পর্ববিন্যাস নির্ণয় করা আবশ্যক।
| Title | বনলতা সেন (হার্ডকভার) |
| Author | জীবনানন্দ দাশ, Jibanananda Das |
| Publisher | আফসার ব্রাদার্স |
| ISBN | 97898490301112 |
| Edition | 1st Published, 2024 |
| Number of Pages | 56 |
| Country | Bangladesh |
| Language | Bengali, |
0 Review(s) for বনলতা সেন (হার্ডকভার)