পল্লী সমাজ
এক
বেণী ঘোষাল মুখুষ্যেদের অন্দরের প্রাঙ্গণে পা দিয়াই সম্মুখে এক পৌঢ়া রমণীকে পাইয়া প্রশ্ন করিল, এই যে মাসি, রমা কৈ গা?
মাসি আহ্নিক করিতেছিলেন, ইঙ্গিতে রান্নাঘর দেখাইয়া দিলেন। বেণী উঠিয়া আসিয়া রন্ধনশালার চৌকাঠের বাহিরে দাঁড়াইয়া বলিলেন, তা হ'লে রমা কি করবে স্থির করলে? জ্বলন্ত উনান হইতে শব্দায়মান কড়াটা নামাইয়া রাখিয়া রমা মুখ তুলিয়া চাহিল, কিসের বড়দা?
বেণী কহিল, তারিণী খুড়োর শ্রাদ্ধের কথাটা বোন। রমেশ ত কাল এসে হাজির হয়েছে। বাপের শ্রাদ্ধ ঘটা করেই করবে বলে বোধ হচ্ছে-যাবে না কি?
রমা দুই চক্ষ বিস্ময়ে বিস্ফোরিত করিয়া বলিল, আমি যাব তারিণী ঘোষালের বাড়ি? বেণী ঈষৎ লজ্জিত হইয় কহিল, সে ত জানি দিদি। আর যেই হোক, তোরা কিছুতেই সেখানে যাবি নে। তবে শুনচি নাকি ছোঁড়া সমস্ত বাড়ি-বাড়ি নিজে গিয়ে ব'লবে বজ্জাতি বৃদ্ধিতে সে তার বাপেরও ওপরে যায় যদি আসে, তা হ'লে কি বলবে?
রমা সরোষে জবাব দিল, আমি কিছুই বলব না-বাইরের দারোয়ান তার উত্তর দেবে।
পূজানিরতা মাসির কর্ণরন্ধ্রে এই অত্যন্ত রুচিকর দলাদলির আলোচনা পৌঁছিবামাত্রই তিনি আহ্নিক ফেলিয়া রাখিয়া উঠিয়া আসিলেন। বোনঝির কথা শেষ না হইতেই অত্যুতৃপ্ত খৈএর মত ছিটকাইয়া উঠিয়া কহিলেন, দারোয়ান কেন? আমি বলতে জানিনা? নচ্ছার ব্যাটারে এমনি বলাই বলব যে, বাছাধন জন্মে কখনো
আর মুখুয্যেবাড়িতে মাথা গলাবে না। তারিণী ঘোষালের ব্যাটা ঢুকবে নেমন্তন্ন করতে আমার বাড়িতে? আমি কিছুই ভুলিনি বেণীমাধব। তারিণী তার ছেলের সঙ্গেই আমার রমার বিয়ে দিতে চেয়েছিল। তখনও ত আর আমার যতীন জন্মায় নি-ভেবেছিল, যদু মুখুয্যের সমস্ত বিষয়টা তা'লে মুঠোর মধ্যে আসবে বুঝলে না বাবা বেণী। তা যখন হ'ল না, তখন ঐ ভৈরব আচায্যিকে দিয়ে কি-সব জপ, তপ, তুকত্যক করিয়ে মায়ের কপালে আমার এমন আগুন ধরিলে দিলে, যে ছ'মাস পেরুল না বাছার হাতের নোয়া মাথার সিঁদূর গুচে গেল। ছোট্ট-জাত হয়ে চায় কিনা যদু মুকুষ্যের মেয়েকে বৌ করতে। তেমনি হারামজাদার মরণ হয়েছে-ব্যাটার হাতের আগুনটুকু পর্যন্ত না। ছোটজাতের মুখে আগুন। বলিয়া মাসি যেন কুস্তি শেষ করিয়া হাঁপাইতে লাগিলেন। পুনঃপুন ছোটজাতের উল্লেক বেণীর মুখ ম্লান হইয়া গিয়াছিল, কারণ তারিণী ঘোষাল তাহারই খুড়া। রমা ইহা লক্ষ্য করিয়া মাসিকে তিরস্কারের কন্ঠে কহিল, কেন মাসি তুমি মানুষের জাত নিয়ে কথা কও? জাত ত আর কারুর হাতে-গড়া জিনিস নয়? যে যেখানে জন্মেচে সেই তার ভাল।
বেণী লজ্জিতভাবে একটুখানি হাসিয়া কহিল, না রমা, মাসি ঠিক কথাই বলেচেন। তুমি কত বড় কুলীনের মেয়ে, তোমাকে কি আমরা ঘরে আনতে পারে বোন। ছোট খুড়োর এ কথা মুখে আনাই বেয়াদবি। আর তুকতাকের কথা যদি বল ত সে সত্যি। দুনিয়ায় ছোট খুড়োর আর ঐ ব্যাটা ভৈরব আচায্যির অসাধ্য কাজ কিছুই নেই। ঐ ভৈরব ত হযেছে আজকাল রমেশের মুরুব্বি।
| Title | পল্লী সমাজ (হার্ডকভার) |
| Author | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, Saratchandra Chattopadhyay |
| Publisher | আফসার ব্রাদার্স |
| ISBN | 9847016700402 |
| Edition | New Edition, 2022 |
| Number of Pages | 80 |
| Country | Bangladesh |
| Language | Bengali, |
0 Review(s) for পল্লী সমাজ (হার্ডকভার)