• 01914950420
  • support@mamunbooks.com
SKU: PNQK1JIZ
0
93 ৳ 160
You Save TK. 67 (42%)
In Stock
View Cart

সত্যে অবিচল, প্রবল প্রতাপশালী এবং দুর্জ্ঞেয় নিয়তির পূর্ব-নির্ধারিত বিধানের কাছে পরাস্ত এক ভাগ্যলাঞ্ছিত রাজার নাম ইডিপাস। গ্রীক ভাষায় উচ্চারণ ‘অয়দিপাউস’। ক্যাডমসের বংশোদ্ভূত থিবিসের প্রবল প্রতাপশালী রাজা ইডিপাস ছিলেন লেয়াস-জোকাস্টার দম্পতির সন্তান। রাজা থিবিসের জনগণকে খুবই ভালবাসেন, থিবিসের প্রজারাও রাজাকে অন্তর দিয়ে ভালবাসে। প্রজাবৎসল এই রাজার নেতৃত্বে থিবিস পরিণত হয় এক সুখী সমৃদ্ধ জনপদে। তাঁর শাসনকালে থিবিসবাসীর জীবন ভরে ওঠে ফুল ফসলে। কিন্তু হঠাৎ থিবিসের আকাশে জমে ওঠে দুর্যোগের ঘনঘটা। দেশের মানুষ আক্রান্ত হয় ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ, মহামারী, ফসল হানিতে। ‘মৃত্তিকার ফলসম্ভারে মৃত্যু, প্রান্তরে অধিত্যকায় মৃত্যু, রমণী জঠরে মৃত্যু এবং মহামারী একটি অগ্নিশিখা রূপে দানবের মতো নগরকে আচ্ছন্ন’ করে তোলে। প্রাকৃতিক দুর্বিপাকে বিপন্ন অসহায় থিবিসবাসী ছুটে আসে রাজা ইডিপাসের কাছে, তাদের ধারণা রাজা ইডিপাস-ই পারেন নগর ও নগরবাসীকে পুনর্বার প্রাণপূর্ণ ও নিঃশঙ্ক করতে। প্রজাদের ব্যথায় সমব্যথী, সাহসদীপ্ত রাজা ইডিপাস এগিয়ে যান নগর ও নগরবাসীকে রক্ষা করতে। বিপর্যয় থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে পড়ে এক নির্মম সত্য- নগরের মহামারী, মনন্তরের জন্য দায়ী রাজা নিজেই। আকাশ ছোঁয়া সাহস, স্পর্ধা আর সত্যানুসন্ধিৎসা নিয়ে ইডিপাস নিজের জন্ম রহস্য আবিস্কারে এগিয়ে চলেন এবং অবশেষে নির্মম সত্যের মুখোমুখি হয়ে জানতে পারেন তার জন্মরহস্য। জানতে পারেন তিনি লেয়াস-জোকাস্টারের পুত্র এবং না জেনে, না চিনে নিজ পিতাকে হত্যা করেছেন। শুধু তাই নয় নিজের অজান্তেই জন্মদাত্রী মায়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ‘যে গর্ভে জন্ম সে গর্ভ সঞ্চারে নিযুক্ত’ হন। ‘পিতা, ভ্রাতা এবং পুত্র,মাতা, স্ত্রী একটি বিভৎস পরিণয়ে সব একাকার’ হয়ে যায়। ইডিপাসের বেদনামথিত জীবনালেখ্য নিয়ে আড়াই হাজার বছর আগে গ্রিক নাট্যকার সফোক্লিস কাব্যভাষায় রচনা করেন কালজয়ী নাটক ‘ইডিপাস রেক্স্’। তাঁর রচিত শতাধিক নাটকের মধ্যে যে সাতটি আজ পর্যন্ত টিকে আছে তাদের মধ্যে ইডিপাস অন্যতম। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল ‘পয়েটিকস’ বইয়ে নাটকটিকে ট্র্যাজেডির উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে প্রশংসা করেছেন। এই নাটকে চিত্রিত হয়েছে মানুষের অপরিসীম হতাশা ও অসহায়ত্ব। পূর্ব-নির্ধারিত বিশ্ববিধানের কাছে ভাগ্যাহত মানুষের অসহায়তা ও বুকফাটা আর্তনাদকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন নাট্যকার সফোক্লেস তার ইডিপাস নাটকে। বাংলাদেশের সাহিত্যের ছাত্র ও পাঠক সমাজের সঙ্গে ইডিপাস নাটকের পরিচয় ঘটে ইংরেজি অনুবাদ থেকে; বিশেষত সৈয়দ আলী আহসানকৃত বাংলা ভাষান্তরের মাধ্যমে। কালজয়ী নাটকটি তিনি ভাষান্তর করেন ই এফ ওয়াল্টিং এর ইংরেজি অনুবাদ অনুসরণ করে। বাঙালি পাঠকের কাছে গ্রিক ট্র্যাজেডির স্বরূপ উপস্থাপন করার জন্য সৈয়দ আলী আহসান এই কালজয়ী অনুবাদকর্মে ব্রতী হন। এই অনুবাদকর্মটিকে আক্ষরিক অনুবাদ বলা যায় না। আবার ইংরেজি অনুবাদের শব্দগত অনুসৃতিও বলা যাবে না। একটি পাঠযোগ্য ও অভিনয়যোগ্য নাটক নির্মাণের লক্ষে সফোক্লিসের ভাবানুষঙ্গে ভিন্ন পথে অগ্রসর হন আলী আহসান। আর বাঙালি পাঠককে এই নাটকের গল্প শোনানোর জন্য কথাসাহিত্যিক রফিকুর রশীদ গল্পের ঢঙে প্রাঞ্জল ভাষায় রচনা করেন ‘ইদিপাসের গল্প’। গ্রিক উচ্চারণ ‘অয়দিপাউস’ নয়; ইংরেজি উচ্চারণ ইডিপাসের বাংলা ধ্বনিগত রূপান্তরকে তিনি গ্রহণ করেছেন। রফিকুর রশীদ গত চার দশক ধরে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় কাজ করে চলেছেন। গল্প, উপন্যাস, শিশুসাহিত্য, গবেষণা আরও কত কী! এবার তিনি মনোনিবেশ করেন বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ গ্রিক নাটক ইডিপাসের দিকে। একাধিক অনুবাদক ও নাট্যজন নাটকটি নিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু কেউ-ই বিশাল তরুণ-পাঠক সমাজের আগ্রহ ও কৌতূহলের কথা চিন্তা করেননি। তরুণ পাঠকদের চিরায়ত বিশ্বসাহিত্যের প্রতি কৌতূহলী করে তোলার এক ধরনের দায়বদ্ধতা নিয়ে গ্রিক নাটকের স্পিরিটের সঙ্গে বাঙালি ভাবাবেগ মিলিয়ে রফিকুর রশীদ রচনা করেন ‘ইদিপাসের গল্প’। নিঃসন্দেহে এটি তাঁর ভিন্নমাত্রিক কাজ। গল্পকার রফিকুর রশীদ সাহিত্যের এক নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক পরিসরে বাংলা সাহিত্যের পাঠ নিয়েছেন। সাহিত্যের ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে তিনি পারতেন ইডিপাস নিয়ে একটি বড় কলেবরের প্রবন্ধ অথবা অভিসন্দর্ভ রচনা করতে। কিন্তু সে পথে তিনি পা মাড়ালেন না। তিনি আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে রচনা করলেন হৃদয়ছোঁয়া ও শিল্পোত্তীর্ণ গল্প- ‘ইদিপাসের গল্প’। প্রতিভা প্রকাশ বইটি প্রকাশ করেছেন এবং প্রচ্ছদ এঁকেছেন রাজিব রায়। শিক্ষিত বিদগ্ধ সমাজকে নয়, যারা ইডিপাস নাটকটি পড়ার বা মঞ্চে দেখার সুযোগ পাননি তাদের কথা ভেবে গল্পকার এই অসাধারণ কাজটি সম্পন্ন করেন। ‘ইদিপাসের গল্প’ পড়ে মুগ্ধ হয়েছি, কিন্তু দুঃখ হচ্ছে এজন্য যে, ঢাকা-কলকাতা কিংবা নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটের বাইরের পাঠকরা বইটি সহজে সংগ্রহ করতে পারবেন না। কারণ প্রতিভা প্রকাশ ঢাকার বাইরের পাঠকদের কাছে বইটি পৌঁছে দেয়ার কোনো উদ্যেগ-ই গ্রহণ করেনি। প্রকাশকের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ বইটি বড় শহরের বাইরে সারাদেশের স্কুল কলেজে ছড়িয়ে দিন- ঢাকার বাইরে মফঃস্বলের তরুণ পাঠকরাও বইটি পড়ে পান করুক গ্রিক ট্র্যাজেডির বেদনামৃত। একাডেমিক ধারার বাইরে এই সাহসী প্রয়াসের জন্য ‘ইদিপাসের গল্প’র প্রকাশক মঈন মুরসালিনকে জানাই কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন। আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, ঝকঝকে ও সুমুদ্রিত বইটি সব পাঠকের কাছে সমাদৃত হবে । কেবল মুদ্রণ নয় এর রূপ বিন্যাসও রুচি স্নিগ্ধ ও শিল্পমণ্ডিত। গল্পের ভাষা ঝরঝরে, নিখাদ ও গতিশীল। কোথাও কোনো ধরনের আড়ষ্টতা নেই। গল্প পড়তে পড়তে নাটকের রসও আস্বাদন করতে পারা যাবে। বইটি সতেরটি শিরোনামে বিভক্ত। ‘এক দেশে এক রাজা ছিলেন’ থেকে ‘সমুখে সত্য’; কোথাও কেউ নেই’ পর্যন্ত এগোতে হয়েছে গহীন অরণ্যে পথহারা পথিকের মতো করে। পুরো বইটা একটা অখণ্ডগল্প। বাংলাদেশের স্বনামধন্য নাট্যদলগুলি বিশেষত, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়, থিয়েটার, আরণ্যক, ঢাকা থিয়েটারের স্বাধীনতা-উত্তর সাড়ে চার দশকের নাট্য পরিক্রমায় শেক্সপিয়ার, চালর্স ডিকেন্স, ব্রেটল্ড ব্রেখট,স্যামুয়েল বেকেট, মলিয়ের অনেক নাটক সফলতার সঙ্গে ঢাকার মঞ্চে মঞ্চায়ন করেছে, কিন্তু সফোক্লিসের ইডিপাস মঞ্চায়ন করতে খুব একটা সাহস দেখায়নি। তাই বাংলাদেশের সাহিত্যমোদী দর্শকরা নাটকটি দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কেবলমাত্র সাহিত্যের বোদ্ধা পাঠকরাই এই নাটকের রস উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছেন। স্বীকার করতেই হয় যে, সাধারণের পাঠোপযোগী একটি মননশীল ‘ইডিপাস’-এর অভাব বাংলা সাহিত্যে ছিল, গল্পকার রফিকুর রশীদ সেই অভাব দূর করলেন তার সোনাল কলমের দীপ্ত স্পর্শে। তাই গল্পকারের ব্যতিক্রমী ভাবনাকে অভিনন্দিত করতেই হয়। সফোক্লিসের নাটক ‘ইডিপাস’ কাব্যভাষায় রচিত, কিন্তু রফিকুর রশীদ ইডিপাসকে উপস্থাপন করেছেন নিজের মতো করে ভিন্ন ভাষাভঙ্গিতে। রশীদের ‘ইদিপাস’ একান্তই তাঁর সৃষ্টিশীল কল্পনাশক্তি থেকে উৎসারিত ‘ইডিপাস’। অন্য কারো অনুবাদের সাথে এটি মিলবে না। তিনি কেবলই বাংলাদেশের তরুণ পাঠকদের জন্য এই কালজয়ী উপাখ্যানটি নির্মাণ করেছেন। তবে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন মূল নাটকের স্পিরিট বজায় রাখতে। গল্পকার ভূমিকায় অকপটে স্বীকার করেছেন: ‘আমি বাঙালি পাঠকের কাছে নাটকের গল্প শোনাতে চেয়েছি।…. নাটকের দ্ব›দ্ব, ঘাত, প্রতিঘাত, সর্বোপরি নাটকীয়তা কিছুতেই গল্পে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়।’ কিন্তু আমার তো মনে হয়েছে ‘ইদিপাস গল্প’ পড়ে পাঠক নাটক ও গল্পের স্বাদ দুই-ই একসাথে আস্বাদন করতে পারবে। গল্প লেখার সময় তিনি যথাসম্ভব নাটকের স্পিরিটটাও রক্ষা করতে চেয়েছেন তার সৃজনকুশলতা দিয়ে। সাহিত্যের শিক্ষক এবং একজন শক্তিশালী কথাশিল্পী হিসেবে তিনি ভালভাবে জানেন যে, সঙ্গীত বা চিত্রকলার মত নাটক কিংবা গল্পকে ‘এলিট আর্ট’ বলা যায় না, এগুলোকে বলা যেতে পারে ‘পপুলার আর্ট’। তাই বইটি তিনি সহজ, সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় রচনা করেছেন। তিনি চাননি এটা নিরস অনুবাদে পরিণত হোক। বহুপ্রভা লেখক রফিকুর রশীদের মননশীল ভাবনাকে অভিনন্দিত করে কিছু প্রত্যাশার কথা বলতে চাই। একজন পাঠক হিসেবে আমার মনে হয়েছে বইটির শেষে একটি গ্রন্থপঞ্জি থাকা দরকার ছিল। যে সব গ্রন্থ বা সূত্র তিনি সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করেছেন তার একটি তালিকা থাকলে আগ্রহী পাঠক সেই সব বই পড়তে পারতেন। একটি নির্ঘন্ট থাকলে ভালো হতো। যদিও গল্পের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। ‘ইদিপাসের গল্প’ কোন প্রবন্ধ বা অনুবাদ নয় বলে গ্রন্থপঞ্জি বা নির্ঘন্ট জাতীয় বিষয়কে লেখক কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। তবে অতি সরল গদ্যে রচিত এই কালজয়ী উপাখ্যানটি সকলের পড়া উচিত বলে আমি মনে করি। কারণ গ্রন্থটি পাঠ করলে জানা যাবে গৌরব শিখর থেকে এক মহানায়কের পতন, মানুষের অসহায়ত্ব, নৈঃসঙ্গ এবং গ্রিক সমাজের বিশ্বাসের জগৎ সম্পর্কে। গল্পকার ও প্রকাশককে আবারও ধন্যবাদ জানাই ভিন্নমাত্রিক কাজের জন্য। আজ থেকে দু’শো বছর আগে ল্যাটিন কবি ভার্জিলের ‘ইনিড’ এর প্রথম অনুবাদ (১৮১০) প্রকাশ করে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ছাত্র হেনরি সার্জেন্ট এবং শ্রীরামপুর প্রেস যে সাহস দেখিয়েছিলেন ওই একই সাহস দেখালেন রফিকুর রশীদ ও প্রতিভা প্রকাশ ইডিপাস নাটককে গল্পের বুনটে উপহার দিয়ে।

Title ইদিপাসের গল্প
Author
Publisher প্রতিভা প্রকাশ
ISBN 9789848056011
Edition প্রথম
Number of Pages 80
Country Bangladesh
Language Bengali,
রফিকুর রশীদ, Rafiqur Rasheed
রফিকুর রশীদ, Rafiqur Rasheed

Related Products

Best Selling

Review

0 Review(s) for ইদিপাসের গল্প

Subscribe Our Newsletter

 0