আমরা যে ভৌগোলিক পরিমন্ডলে বসবাস করি ধীরে ধীরে ঠিক তেমনটাই হয়ে উঠি। এই ভৌগোলিক অবস্থান ক্ষমতা, যুদ্ধ, রাজনীতি, সামাজিক উন্নতি ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রেই তার প্রভাব ফেলে। আজ প্রযুক্তির উন্নতির ফলে গোটা পৃথিবী হয়তো হাতের মুঠোয় চলে এসেছে কিন্তু একথা ভুললে চলবে না যে আমরা যে ভৌগোলিক পরিমÐলে বসবাস করি তা সমান গুরুত্বপূর্ণ। যে পৃথিবীর বুকে এত কোটি মানুষ বেঁচে আছে তা চিরকালই নদনদী, পাহাড়-পর্বত, মরুভ‚মি, হ্রদ ও সমুদ্রের দ্বারা বিভক্ত হয়েছিল। ঘটনাচক্রে সেই বাধা অতিক্রম করা সবসময় আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
তবে কোনো একটি বিশেষ ভৌগোলিক বিষয়ে যে অপরটির থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ তেমন ভাবার কোনো কারণ নেই। পাহাড় কখনো মরুভ‚মির থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, আবার নদী কখনো জঙ্গলের থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে না। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তেÍ বিভিন্ন ভৌগোলিক সীমারেখা ঠিক করে দেয় যে সেখানকার মানুষ কী করতে পারবে এবং কী করতে পারবে না।
মোদ্দা কথা, ‘জিও-পলিটিক্স’-এর মাধ্যমে আমরা দেখতে পারি কীভাবে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তগুলো ভৌগোলিক বিষয়ের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়। কেবল ভৌগোলিক বাধাই (উদাহরণস্বরূপ পাহাড়, মরুভ‚মি কিংবা জঙ্গলের মতো বাধাগুলো) নয় আবহাওয়া, সীমারেখা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অঞ্চল এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপস্থিতিও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয়ে আমাদের সভ্যতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। রাজনৈতিক এবং সামরিক সিদ্ধান্তের সাথে সাথে মানব সভ্যতার অগ্রগতি, ভাষা, বাণিজ্য এমনকি ধর্মের ক্ষেত্রেও এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।
ইতিহাস কিংবা তৎকালীন আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পর্কে লেখার ক্ষেত্রে আমরা এটি ভুলেই যাই যে এসব ভৌগোলিক বিষয় কীভাবে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। “কী” এবং “কেন” এই দুই প্রশ্নেœর উত্তরেই ভ‚গোল এক গুরুত্বপূর্ণ জবাব দিতে পারে। ভৌগোলিক পরিমÐল হয়তো কোনো সিদ্ধান্তের নির্ণায়ক হতে পারে না কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ সেটা উপেক্ষা করে ফেলে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চীন এবং ভারত, দুই বৃহৎ জনসংখ্যা বিশিষ্ট দেশ নিজেদের মধ্যে একটি বিরাট আন্তর্জাতিক সীমানা বয়ে নিয়ে চলেছে। অথচ এই দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক কোনো মিল নেই। এই দুই ক্ষমতাধর দেশ যদি বেশ কয়েকবার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করত তাতে অবাক হওয়ার কোনো কারণ থাকত না। তবে কেবল ১৯৬২ সালের ওই একমাস ব্যাপী যুদ্ধ ছাড়া তাদের মধ্যে আর কখনো কোনো প্রকাশ্য সংঘর্ষ দেখা যায়নি। কিন্তু কেন? কারণ এই দুই দেশের মধ্যে পৃথিবীর সর্বোচ্চ হিমালয় পর্বতমালা অবস্থান করছে। এই বিরাট পর্বতমালা অতিক্রম করে বিরাট সৈন্য বাহিনী নিয়ে এক দেশ অন্য দেশের ওপর চট করে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবে না। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এই বাধা অতিক্রম করার সহজ হয়ে পড়লেও এই ভৌগোলিক বাধা চিরকাল থেকেই যাবে। তাই এই দুই দেশ একে অন্যের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে থাকলেও মূলত তাদের অন্যান্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বেশি মনোনিবেশ করে।
Title | প্রিজনার্স অব জিওগ্রাফি |
Author | Sir John Scarlett |
Publisher | ভাষাবুনন |
ISBN | |
Edition | 1st Edition |
Number of Pages | 270 |
Country | Bangladesh |
Language | Bengali, |
0 Review(s) for প্রিজনার্স অব জিওগ্রাফি