"সূর্য দীঘল বাড়ী বইটির ফ্ল্যাপের কথাঃ
উভয় বাংলার অল্পক'টি সার্থক উপন্যাসের মধ্যে সূর্য-দীঘল বাড়ী একটি। অনূদিত হয়ে বইটি বিভিন্ন বিদেশী ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। সূর্য-দীঘল বাড়ী অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ছ'টি আন্তর্জাতিক এবং বিভিন্ন বিভাগে নটি জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। তার ছোট গল্পগ্রন্থ 'মহাপতঙ্গ 2039. The Dragonfly' (মহাপতঙ্গ) গল্প অবলম্বনে রচিত চিত্রনাট্য সুইজ্যারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ করে। হারেম' নামে তার প্রথম ছোটগল্প-গ্রন্থটির ততীয় মুদ্রণ ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রথম মুদ্রিত গল্প 'অভিশাপ' প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত নবযুগ (কলকাতা)। পত্রিকায়।
বইটির প্রথম অংশের কিছু কথাঃ
তার বংশ ধ্বংস হয়। বংশে বাতি দেয়ার লোক থাকে না। গ্রামের সমস্ত বাড়ীই উত্তর-দক্ষিণ প্রসারী।। সূর্য-দীঘল বাড়ীর ইতিহাস ভীতিজনক। সে ইতিহাস জয়গুন ও শফির মা-র অজানা নয়। সে অনেক বছর আগের কথা। এ গ্রামের হাতেম ও খাদেম নামে দুই ভাই ছিল। ঝগড়া করে ভাই-ভাই ঠাই-ঠাই হয়ে যায়। খাদেম আসে সূর্য-দীঘল বাড়ীটায়। বাড়ীটা বহুদিন থেকেই খালি পড়ে ছিল।। এখানে এক সময়ে লোক বাস করত, সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা বংশ রক্ষা করতে পেরেছিল কিনা কেউ জানে না। তবুও লোকের ধারণা, সূর্য-দীঘল বাড়ীতে নিশ্চয়ই বংশ লোপ পেয়ে থাকবে। নচেৎ এরকম বিরান পড়ে থাকবে কেন? যাই হোক, শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিষেধ অগ্রাহ্য করে খাদেম এসে সূর্য-দীঘল বাড়ীতে বসবাস আরম্ভ করে। কিন্তু একটি বছরও ঘুরল না। বর্ষার সময় তার একজোড়া ছেলে-মেয়ে পানিতে ডুবে মারা গেল। সবাই বুঝতে পারল-বংশ নির্বংশ হওয়ার পালা শুরু হল এবার। বুড়োরা উপদেশ দিলেন বাড়ীটা ছেড়ে দেয়ার জন্য। বন্ধু- বান্ধবরা গালাগালি শুরু করল-আল্লার দুইন্যায় আর বাড়ী নাই তোর লাইগ্যা। সূর্য-দীগল বাড়ীতে দ্যা কি দশা অয় এইবার।। খাদেমের মনেও ভয় ঢুকে গিয়েছিল। সাতদিনের মধ্যে ঘর-দুয়ার ভেঙ্গে সে অন্যত্র উঠে যায়। জয়গুনের প্রপিতামহ খুব সস্তায়, উচিত-মূল্যের অর্ধেক দিয়ে তার কাছ থেকে বাড়ীটা কিনে নেয়। উত্তরাধিকারের সেই সূত্র ধরে জয়গুন ও শফি এখন এ বাড়ীর মালিক।। ঐ ঘটনার পর অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। এতদিনের মধ্যে আর কোনো লোক ভুলেও এ বাড়ীতে আসেনি। আকালের সময় জয়গুন ও শফির মা এ বাড়ীটাই বিক্রী করতে চেয়েছিল। কিন্তু সূর্য-দীঘল বাড়ী কেউ কিনতে এগোয়নি। তখন এ বাড়ীটা বিক্রী করতে পারলেও জয়গুনের স্বামীর ভিটেটুকু রক্ষা করা যেত; ছেলে-মেয়ের বাপ-দাদার কবরে আজ আবার বাতি জ্বলত। বহুদিনের পরিত্যক্ত বাড়ী। সর্বত্র হাঁটুসমান ঘাস, কচুগাছ, মটকা ও ভট-শেওড়া জন্মে অরণ্য হয়ে আছে। বাড়ীর চারপাশে গোটা কয়েক আমগাছ জড়াজড়ি করে আছে। বাড়ীর পশ্চিম পাশে দুটো বড়া বাঁশের ঝাড়। তা ছাড়া আছে তেঁতুল, শিমুল ও গাবগাছ। গ্রামের লোকের বিশ্বাস-এই গাছগুলোই ভূত-পেত্নীর আড্ডা। অনেকদিন আগের কথা। সন্ধ্যার পর গদু প্রধান সোনাকান্দার হাট থেকে ফিরছিল। তার হাতে একজোড়া ইলিশ মাছ। সূর্য-দীঘল বাড়ীর পাশের হালট দিয়ে যেতে যেতে সে শুনতে পায়-অই পরধাইন্যা, মাছ দিয়া যা। না দিলে ভালা অইব না। প্রথমে গদু প্রধান ভ্রুক্ষেপ করেনি। পরে যখন পায়ের কাছে ঢিল পড়তে শুরু করে, তখন তার হাত থেকে মাছ দুটো খসে পড়ে যায়। সে 'আউজুবিল্লাহ্' পড়তে পড়তে কোনো রকমে বাড়ী এসেই অজ্ঞান। রহমত কাজী রাত দুপুরের পর তাহাজ্জুদের নামাজ পড়বার জন্যে ওজু করতে বেরিয়ে ফুটফুটে জোছনায় একদিন দেখেছে-সূর্য-দীঘল বাড়ীর গাবগাছের টিকিতে চুল ছেড়ে দিয়ে একটি বউ দু'পা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক দৃষ্টিতে সে চেয়ে দেখছিল। চোখের পলক ফেলে দেখে আর সেখানে বউ নেই। একটা ঝড়ো বাতাস উত্তর-পশ্চিম কোণাকুণি করম আলী হাজীর বাড়ীর ওপর দিয়ে চলে গেল। পরের দিনই করম আলী হাজীর.........
Title | সূর্য দীঘল বাড়ী |
Author | আবু ইসহাক,Abu Ishaq |
Publisher | নওরোজ সাহিত্য সম্ভার, Nourose Shahitto Somver |
ISBN | 9789847021348 |
Edition | 25th Edition, 2017 |
Number of Pages | 110 |
Country | Bangladesh |
Language | Bengali, |
0 Review(s) for সূর্য দীঘল বাড়ী