• 01914950420
  • support@mamunbooks.com
SKU: 00YLX4Q7
0 Review(s)
224 ৳ 280
You Save TK. 56 (20%)
In Stock
View Cart

সামনে অবারিত মাঠ।
একপাশে লম্বা সারিতে ছোট ছোট টিলা। গাছপালা নেই, তাই সবুজের অভাব। বালুর ঢিবির মতো টিলা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার গা ঘেঁষে দূরে উপত্যকার মতো জায়গায় কিছু বসতি। অদ্ভুত আকারে, ছোট ছোট একচালা ঘর। প্রথম দেখাতে মনে হতে পারে, ঘরের মালিকদের রুচিবোধের কিছু নেই। হয়তো বড় আলসে প্রকৃতির লোক হবে এরা। ভাঙা-চুরা ঘরগুলোর দিকে তাকালে প্রথম প্রথম এমনটা ভাবাই স্বাভাবিক।
ত্রিমাত্রিক ঘরগুলোর চারদিকে বেড়া। দরজা-জানালা আছে কী-না; তা দূর থেকে দেখে বোঝা মুশকিল। বেশিরভাগ ঘরে রঙ ওঠে জং ধরে গেছে। আবারও যে রঙ দিতে হবে, দেখে মনে হচ্ছে, এটি এখানকার বসতি স্থাপনকারীদের মনেই নেই। যেন বিষয়টি তারা বেমালুম ভুলেই গেছে!
প্রকৃত অর্থে এটি একটি বস্তি। এই উপত্যকা ঘিরে গড়ে উঠেছে হালকা বসতি। এখানকার অধিবাসীদের কাছে একেবারে বেকার থাকার চেয়ে মেষ চরানো একটু বেশি মর্যাদার। চাকরি-বাকরি কেউ করে না। এদের মধ্যে বাকি যারা আছে, তাদের বেশি সংখ্যক সৈনিক। এর বাইরে ব্যবসা হচ্ছে আয়ের আরেক উৎস। তবে এদের সংখ্যা কম। তাই কেনাকাটার ভালো দোকানপাট আশপাশে নেই। জায়গাটি মূল শহর থেকে ৬১ কিলোমিটার দূরে।
সন্ধ্যা নেমেছে অনেক আগে। এখন রাত। আকাশে জ্বলজ্বল করছে একটি বড় তারা। আসলে এটি তারা নয়, একটি গ্রহ। রুশান সেই গ্রহের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে আছে। অষ্টমমাত্রার শক্তিশালী বাইনোকুলার চোখে লাগিয়ে গ্রহটিকে কাছে টেনে ভালো করে দেখছে।
বাইনোকুলারটি একটি উচ্চমাত্রার শক্তিশালী টেলিস্কোপের মতো। তবে গণিতের বাকি প্রোগ্রাম না থাকায় এটি দিয়ে শুধু দেখার কাজ করা যায়। সম্পূর্ণ ও আধুনিক টেলিস্কোপের কোনো স্বাদ পাওয়া যায় না। প্রগৈতিহাসিক যুগের বাইনোকুলারের সঙ্গে এর পার্থক্য হচ্ছে সংস্কারিক বা পূনর্গঠন সংক্রান্ত। আগের বাইনোকুলারের সঙ্গে যোগ করা হয়েছে জ্যামিতিক অতি প্রয়োজনীয় কিছু সূত্র। এগুলোর কল্যাণে এটি এখন অঙ্ক কষে স্থানের দূরত্ব বলে দিতে পারে। তবে আকারের ঘনত্ব নয়। ফলে দূরত্বের বাইরে আর কোনো ব্যাখ্যা এ থেকে পাওয়া যায় না। এ জন্য এটিকে বলা হয়, তৃতীয় মাত্রার টেলিস্কোপ সংস্করণ। ওই টেলিস্কোপগুলো এসব কাজ অতি নির্ভুলভাবে করে দিতে পারে। হালকা ও সহজে বহন করার জন্য বাইনোকুলারকে টেলিস্কোপের মর্যাদা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। অবাক হওয়ার কিছু নেই, একটি হ্যান্ডব্যাগে ঢুকিয়ে দিব্যি বহন করা যায় এটিকে। আদর করে তাই অনেকে একে ‘বেবি টেলি’ বলেও ডাকে।
সামনের গ্রহ আলোয় জ্বলজ্বল করছে। তার উপর থেকে রুশানের চোখ সরছেই না। সারা শরীর যেন নীল আবরণে আচ্ছাদিত। এর নাম পৃথিবী। ওখানেই আছে ফারি কলোনি। পৃথিবীবাসী ফারি কলোনিকে পিরামিড বলে ডাকে। ত্রিমাত্রিক এই বসতিগুলো তাদের কাছে এখনও বিস্ময়। পৃথিবীর অতি আশ্চর্যের একটি। তবে রুশান জানে, এগুলো তাদের পূর্বপুরুষের তৈরি। এলিয়েনরা ফারি কলোনি নির্মাণ করেছে।
কিন্তু সে এটা বুঝে না, পৃথিবীর মানুষ এতো অদ্ভুত চরিত্রের হয় কেমন করে! কেন তারা ফারি কলোনির মতো প্রাচীন স্থাপনাগুলোকে দেখতে হাজার হাজার কিলোমিটার দূর থেকে উড়ে আসে! কেনই বা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে এর জন্য! রুশান কিছুতেই বুঝে না, আসলে এর মধ্যে কী এমন অনুভূতি কাজ করে! এখানে কী এমন লুকিয়ে আছে যে, পুরনো বসতিগুলোকে এভাবে হইহুল্লোড় করে দেখতে হবে! কতগুলো জং ধরা, মরচে পড়া ফারি কলোনিকে! যা ঠিক তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উপত্যকার ওই ঘরগুলোর মতোই। এখানে এগুলো দেখতে কেউ তো আসে না! যদি শুনতো এগুলো দেখতে কেউ হাজার হাজার মাইল দূর থেকে টাকা খরচ করে এসেছে, তাহলে এখানকার এলিয়েনরা হাসতে হাসতে নিজেরাই গায়ে কাতুকুতু তুলে ফেলতো।
রুশান এই স্থাপনা দেখতে যাবে স্বশরীরে। পূর্বপুরুষের নির্মাণ কৌশল দেখবে তাদের একটি দল। সেখানে গিয়ে তারা নিজেদের পুরনো এলিয়েনদের প্রাচীন বুদ্ধিমত্তার জ্যামিতিক অনুসন্ধান চালাবে। তাদের এ দলটির নেতৃত্ব দেবে সিনিয়র সিটিজেন এলিয়েন রুবিনা। রুবিনা তাদের এরিয়া সেভেন্টিনের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভ্রান্ত শ্রেণির এলিয়েনদের একজন। তাকে দেখে মনে হয় একেবারে সাদাসিধে এলিয়েন সে। তার ভেতরে কোনো অহংকার নেই। সব সময় থাকে সাদাসিধে ভাবে। শুনে বেশি, বলে কম। কিন্তু যা বলে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যবহুল। প্রখর বুদ্ধিমত্তার অধিকারী। এ জন্য শেষ বয়সে এসেও তরুণ একটি দলের নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে তাকে।
অবশ্য এর পেছনে তার আগের ফারি কলোনির অভিজ্ঞতাও ভূমিকা রেখেছে। সৌর বিজ্ঞানীদের মধ্যে সে একজন পৃথিবী বিশেষজ্ঞ। পৃথিবী বিষয়ে তার জ্ঞান ও ভবিষ্যদ্বাণী বিস্ময়কর। এগুলো যেন রক্তজাত। আগের ব্যর্থ অভিযানগুলোর কয়েকটির সদস্যও ছিল রুবিনা। ফারি কলোনির অভিযানে বেঁচে থাকা অভিযাত্রীদের মধ্যে এখন সে-ই একমাত্র। তাছাড়া সরাসরি তার পূর্বপুরুষের অনেকে ছিল ওই কলোনি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত।
তারা মূলত পবিত্র সেই সব এলিয়েনদের অংশীদার, যারা ঈশ্বরে বিশ্বাসই শুধু করত না, সব এলিয়েনের ভেতরে ঈশ্বরকে খুঁজেও ফিরত। এ জন্য তারা বিশ্বাস করত, ঈশ্বরে বিশ্বাসী এলিয়েনরা ভাল-মন্দ হতে পারে। তবে মৃত্যুর পর তাদের আত্মার মাঝে আর কোনো কালিমা থাকে না। তারা হয়ে যায় পবিত্র। কারণ, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তারা যে যা করেছিল, তার পরিণাম ভোগ করে ফেলে। স্বর্গে শুধু মর্যাদা নির্ধারিত হয় নিজের কর্ম ফলের উপর।
রুবিনা তাদের বংশধর। এসব নানা কারণে তাকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। সে-ই একমাত্র সিটিজেন এখানকার, যে ফারি কলোনিকে উত্তরাধিকার সূত্রে নিজেদের ‘বাড়ি’ বলে মনে করে। তার নামে এ অভিযানের নামকরণ হয়েছে এলিয়েন রুবিনা, অভিযান ২২৪।
রুশান সেই দলের সহ-অধিনায়ক। প্রথম শ্রেণির আকাশচারী হওয়ায় তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ অভিযাত্রা নিয়ে রুশানের ভেতর চলছে এক ধরনের অস্থিরতা। অদ্ভুত ধরনের অনুভূতি কাজ করছে তার মাঝে। এই অস্থিরতা মেটাতে শহর ছেড়ে বাইনোকুলার নিয়ে একাকী চলে এসেছে এখানে। এই প্রথম সে এসেছে, তাও নয়। এই ঢিবিতে দাঁড়িয়ে আগেও দু’বার অপলক তাকিয়ে দেখেছে পৃথিবীকে। প্রতিবার তার কাছে গ্রহটিকে মোহনীয় মনে হয়েছে। কেন জানি এখন একটু একটু আপন লাগে। মায়া লাগতে শুরু করেছে পৃথিবীকে। তাদের পূর্বপুরুষ কী শুধু ধর্মপ্রচার কিংবা নাগরিক প্রয়োজনে বসতি স্থাপনের ব্যর্থ চেষ্টা করতে গিয়েছিলেন সেখানে? নাকি এর পেছনে কোনো মায়া কাজ করেছে? তার এ আপন আপন লাগা কী তাহলে পূর্বপূরুষের সেই মায়ারই নির্যাস? বুঝতে পারে না সে। কিছুই বুঝতে পারে না এর। তাহলে কী সেটি বুঝতে পারে এলিয়েন রুবিনা? সে তা জানে না।
আজও সে ওই একই ঢিবিতে বসে পৃথিবীর দিকে তাকিয়েছিল আর নানা কথা ভাবছিল। ভাবছিল, সরাসরি কেমন দেখাবে গ্রহটিকে? অবিকল এ রকমই? যেভাবে এখন দেখছে সে, নীল আবরণে আচ্ছাদিত। নাকি দেখতে আরও ভালো লাগবে। নাকি আরও মন্দ, কোনটি? তবে সে জানে, কাছে থেকে দেখা আর দূর থেকে দেখার মধ্যে অনেক তফাৎ। পৃথিবীর ক্ষেত্রে এ তফাৎ কতটুকু হবে? যাই হোক, সে ব্যাপারটি নিয়ে আর ভাবতে চায় না। কাছে থেকেই দেখবে তফাৎটা। সে তার পূর্বপুরুষের তৈরি ওইসব বসতিগুলো দেখবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। যে ফারি কলোনি এখন পরিত্যক্ত।
আচ্ছা, রুশানের মাঝে এই অনুভূতি কাজ করছে কেন? তার পুলকিত হওয়ার একটা কার্যকারণ আছে। তাহলে কী এ জন্যই পৃথিবীর মানুষ এগুলো দেখতে দূর থেকে ছুটে আসে? কিন্তু কেন? রুশানদের মতো এগুলো তো তাদের পূর্বপুরুষের স্থাপনা নয়। তাহলে কিসের মায়া এর জন্য? কিসের পুলক এর জন্য? না, এরও কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পায় না রুশান।
অনেক রাত হয়ে গেছে। ততক্ষণে সেই ঝলমলে গ্রহটি পশ্চিমে বেশ খানিকটা হেলে পড়েছে। রুশানের এবার সময় হয়েছে ফিরে যাবার। বাইনোকুলার চোখ থেকে নামিয়ে রেখেছিল অনেক আগেই। তাকিয়ে ছিল পৃথিবী নামক গ্রহটির দিকে। উঠে পড়ার আগে আবার বাইনোকুলারের চোখ দিয়ে দেখল সেই গ্রহটিকে। নীল আবরণে আচ্ছাদিত পৃথিবীকে এবারও তার কাছে আগের মতো সমান মোহনীয় মনে হলো।
রুশান চোখ থেকে বাইনোকুলার সরিয়ে উঠে দাঁড়াল। পেছনে ফিরে তাকাল ঢিবির শেষ মাথায়। উপত্যকার একেবারে শেষ মাথায় তার যান রাখা। অন্ধকারে আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছে সেটিকে। রুশান পা বাড়াল ওদিকে।

Title এলিয়েন ‍রুবিনা
Author
Publisher কারুবাক, Karubak
ISBN 9789849301332
Edition 1st Published, 2018
Number of Pages 150
Country Bangladesh
Language Bengali,

Related Products

Best Selling

Review

0 Review(s) for এলিয়েন ‍রুবিনা

Subscribe Our Newsletter

 0