নিজেকে প্রকাশ করা মানুষের এক আদিম প্রবৃত্তি। মুখাভিনয়, নৃত্যকলা, ছবি আঁকা, অভিনয়, গল্পবলাÑএসব মাধ্যমে সংখ্যা গণনার অতীত প্রত্যুষ থেকে শিল্পীরা নিজেকে প্রকাশ করে আসছে। গত একশ-দেড়শ বছর ধরে এসব মাধ্যমে যন্ত্রের প্রচলন হয়েছে। মানুষের আবিষ্কারের সাথে সাথে এসব যন্ত্রও নানাভাবে মানুষের ভাবনাগুলো প্রকাশ করতে শুরু করেছে। রেডিও, সিনেমা এবং সর্বশেষ টেলিভিশন। টেলিভিশন এক বিষ্ময়কর আবিষ্কার। বেতারের মাধ্যমে ঘরে ঘরে ছবি পৌঁছে দিয়ে যায়। তাই টেলিভিশন পরিবারের সদস্য হওয়ার মর্যাদা লাভ করে। শুধু সংবাদ প্রচার নয়, চলচ্চিত্রের সবগুলো সুযোগ টেলিভিশন গ্রহণ করে। কাহিনিচিত্র, প্রমাণ্যচিত্রসহ আরো অনেক বিষয় প্রকাশের মাধ্যমে শিল্প সৃষ্টির উদ্যোগে নিবেদিত হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি নাটক।আমরা যখন ষাটের দশকের শেষে টিভি নাটক লেখা শুরু করি তখন মূলত চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকেই অনুসরণ করি। কারণ তখন টিভি নাটকের তাত্ত্বিকতা নিয়ে কোনো ধরনের বই-পুস্তক আমাদের হাতে আসেনি। আমাদের নাটকে দর্শকপ্রিয়তার অভিজ্ঞতা নাট্যরচনার কাজে একটা বড় উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। টেলিভিশনেরও প্রযুক্তিগত উন্নতি হতে থাকে। এরমধ্যে টেলিভিশন নাটকের সম্পাদনা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সময়ের সাথে সাথে নাট্যরচনার ক্ষেত্রে অনেক যুগান্তকারী পরিবর্তন এসে যায়।টেলিভিশন নাটক যেখান থেকে শুরু হয়েছিল সেসব সোপ অপেরা আমাদের দেশে ধারাবাহিক নাটক হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ধারাবাহিক নাটক এতই জনপ্রিয় হয় যে মানুষ তার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকে। ইতোমধ্যে নাট্যরচনা এবং তার প্রায়োগিক দিক নিয়ে অনেক তাত্ত্বিক বই-পুস্তক লেখা হয় এবং সেগুলো পাশ্চাত্যের দেশ থেকে আমাদের দেশে আসতে অনেক সময় লেগে যায়। টেলিভিশন একটা সময় একেবারেই রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে ছিল। নব্বইয়ের দশকে তা বেসরকারি খাতে প্রবেশ করে। এই বেসরকারি খাত যথেষ্ট লাভজনক হবার ফলে একটা তীব্র প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। এই সময়ে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়েও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান চাহিদা হলো তাত্ত্বিক জ্ঞানসমৃদ্ধ বই, যার মধ্যে অবশ্যই ব্যাবহারিক বিজ্ঞানটিও উপস্থিত থাকবে।আমি অত্যন্ত বিষ্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, হাসান রাউফুন এক দশক ধরে টিভি নাটক নির্মাণের কলাকৌশল চিত্রনাট্য রচনা, গল্প বলা ইত্যাদি বিষয়ে বেশ কয়েকটি বই রচনা করেছেন। যারা এই শিল্পে নবাগত তাদের জন্য বইটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। মনোযোগ দিয়ে বইগুলো অধ্যায়ন করলে যেকোনো শিক্ষার্থী টিভিনাটকের নির্মাণ কৌশল সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পেতে পারে। যদিও তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রাথমিকভাবে খুবই জরুরি কিন্তু ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে এই জ্ঞানকে অবশ্যই সৃজনশীলতায় রাঙাতে হয়। যেটি নির্মাতার নিজস্ব মৌলিক চিন্তা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম লেখককেও বর্ণমালা শিখতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে নির্মাতাকেও প্রাথমিক জ্ঞান সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা প্রয়োজন।হাসান রাউফুনের টিভিনাটক নির্মাণের কলাকৌশল বইটিতে মোটামুটি বিস্তারিত একটি ধারণা দেয়া আছে। অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় গুরুগম্ভীর কোনো আলোচনায় না গিয়ে তিনি প্রাথমিক ছাত্রদের কাছে এই জ্ঞানকে পৌঁছে দিয়েছেন। আজকাল টিভি নাটক নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সবাই তাত্ত্বিক জ্ঞানের বিষয়ে একেবারে উদাসীন। এই উদাসীনতা আত্মঘাতী যার কারণে শিল্পের নামে গণ্ডায় গণ্ডায় আবর্জনা সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু দেশে অনেকগুলো টেলিভিশন চ্যানেল, তাই নাটকের চাহিদাও প্রচুর। শিল্পের উৎকর্ষতায় বিচার-বিবেচনা যেখানে কম সেখানে আবর্জনা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। তদুপরি আছে আর্থিক বিবেচনা।সকল বিবেচনায় প্রাথমিক এবং পরবর্তী প্রয়োজনে বিশেষ করে কলেজ বিশ^বিদ্যালয় ও টেলিভিশন প্রশিক্ষণের জন্য টিভিনাটক নির্মাণ কলাকৌশল বইটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ বলে বিবেচনা করছি। বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ হচ্ছে। তার অর্থ ইতোমধ্যেই একটি বড় ধরনের চাহিদা তৈরি হয়েছে। আশা করব, বর্তমান প্রজন্মের কাছে বইটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ বলে বিবেচিত হবে।মামুনুর রশীদঢাকা২৩ অক্টোবর ২০২২
Title | টিভি নাটক নির্মাণের কলাকৌশল |
Author | হাসান রাউফুন, Hasan Raufoon |
Publisher | কারুবাক, Karubak |
ISBN | 9789849637332 |
Edition | 1st Edition, 2023 |
Number of Pages | 188 |
Country | Bangladesh |
Language | Bengali, |
0 Review(s) for টিভি নাটক নির্মাণের কলাকৌশল