১৯৭১ সাল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। আর এ সময় বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এক বিন্দুতে মিলেছিল। সে সময় দক্ষিণ এশিয়ায় যে রাজনৈতিক ঘটনাবলী সংঘটিত হয়েছিল তার পিছনে ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বিসর্জন দেওয়া। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সঙ্গে ভারতীয় সৈন্যদের রক্ত মিশিয়ে আছে। ১৯৭১ এর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত সমর্থনে ভারতের মানবতাবাদী সেদিনের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী অক্লান্ত পরিশ্রম করেন এবং কুটনৈতিক ক্ষেত্রে আগস্ট মাসে তিনি একটি বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যার ফলে মুক্তিযুদ্ধকে সফল করার লক্ষ্যে সোভিয়েত ও ভারতের মধ্যে একটি মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে সরাসরি সাহায্য করতে থাকে। ১৯৭১ এ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক মেধা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর মানবতার গভীরতায় দুই দেশ এক বিন্দুতে মিলিত হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা উত্থাপন করায় তিনি বাঙালির মহান নেতায় পরিণত হন। এভাবে উনসত্তরে গণভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশকে স্বাধীনতার সিংহদ্বারে নিয়ে আসে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সমর্থনের প্রধান দুটি কারণ ছিল। ১. মানবিক বিবেচনা ২. অবিশ্বাস হারে স্মরণার্থী প্রবেশ করায় আশ্রয় দেওয়া ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা ছিল না। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী স্মরণার্থী শিবিরগুলি পরিদর্শন করতে থাকেন এবং মানবিক বিবেচনায় স্মরণার্থী সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য তৎপর ছিলেন। ১৯৭১ এর ভারতীয় সেনাবাহিনী পূর্বাঞ্চলের কমান্ডার প্রধান লেঃ জেনারেল জগৎজিত সিংহ অরোরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাহায্য করার জন্য মতামত পোষণ করেন। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় সাহায্য করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ৫ জুন কলকাতায় আসেন এবং পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী সভার সদস্যগণ আর ইস্টার্ণ কমান্ডের প্রধান সহ সামরিক অফিসারদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পরিকল্পনায় তিনটি বিষয় স্থান পায়। ১. স্মরণার্থীদের জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করা ২. স্মরণার্থীদের জীবনের ভয়াবহ চিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা। ৩. সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখেন।
হিজ এক্সিলেক্সি মিঃ তাজ উদ্দিন আহমেদ, প্রিয় প্রধানমন্ত্রী এবং ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ৪ ডিসেম্বর যে বার্তাটি পাঠায়েছেন, তা আমাকে এবং ভারত সরকারের সকলকেই স্পর্শ করেছে। ভারত সরকার স্বীকৃতি প্রদানের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দুই দেশের বন্ধুত্ব অক্ষুন্ন থাকবে। আপনারা নিশ্চিত বিজয়ী হবেন। বাংলাদেশের জনগণকে এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অভিনন্দন জানাই। আপনার মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে আমার সর্বোচ্চ সম্মানের নিশ্চয়তা জ্ঞাপন করিলাম।
শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী
পাকিস্তান সেনাবাহিনী অপারেশন চার্জ লাইট এর মাধ্যমে পূর্ব বাংলায় গণহত্যার সূচনা করলে তার বিরুদ্ধে প্রথমেই নিন্দা জানায় শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। ৩১ মার্চ ভারতীয় লোকসভায় বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছে এ প্রস্তাব উত্থাপনে বলা হয় যে, পূর্ব বাংলার সাড়ে সাত কোটি বাঙালির বিজয় অবশম্ভাবী। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী নিশ্চিত ছিলেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ব্যর্থ হতে পারে না।
শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করায় আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এয়াহিয়া খান দুই বার সাধারণ ঘোষণা করিলেও কোন বাঙালির স্মরণার্থী ভারত থেকে ফিরে আসেননি। কারণ ১৯৭১ এর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ ছিল স্বাধীনতা অর্জনের এক পরিপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধ।
বিশ্বের এক বলিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করেছেন। তাই এক কোটি স্মরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছেন, স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে পৃথিবী বিভিন্ন প্রান্তে কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছেন। ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথ চেষ্টায় বিজয়ের পতাকা উড়ে। তাই মানবতার নেত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী স্বাধীনতার জন্য যে অবদান রেখেছেন তা নতুন প্রজন্মকে জানান দেওয়া প্রয়োজন ।
Title | বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকা |
Author | তপন কুমার দে,Topon Kumar De |
Publisher | কাকলী প্রকাশনী |
ISBN | 9847013300106 |
Edition | 1st Published, 2011 |
Number of Pages | 142 |
Country | Bangladesh |
Language | Bengali, |
0 Review(s) for বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকা