বর্তমানে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সমাজের শ্রেণিভেদকে শুধু মেনেই নেয়নি তাকে ক্রমাগত বৃদ্ধি করে চলেছে। এ অর্থে এটি আমাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বাংলাদেশে এখন তিন ধারার শিক্ষা বিদ্যমান। প্রথম ধারাটি বাংলা মাধ্যমে শিক্ষা দিচ্ছে। মূলত সরকারি-বেসরকারি খাতে নিম্ন বেতন বা মাঝারি বেতনের বিনিময়ে, মূলধারার পাঠক্রম অনুসারে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এই শিক্ষা কার্যক্রম বিস্তৃত। এটা মূলত দেশের মধ্যস্তরের জনগণকে শিক্ষিত করে তুলছে। এরা তুলনামূলকভাবে কম বিদেশমুখী, কম বিজাতীয় সংস্কৃতির দিকে আকৃষ্ট এবং ধর্মপরায়ণ হলেও ধর্ম গোঁড়া বা মৌলবাদী নয়। তবে কারো কারো মতে, মধ্যবিত্তদের মধ্যেও বর্তমানে সাম্প্রদায়িকতার দ্রুত প্রসার ঘটছে। সম্ভবত বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতির নানা সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতাই এর জন্য দায়ী। দ্বিতীয় ধারাটি মোটামুটি উচ্চবিত্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এরা ইংরেজি মাধ্যমে, উচ্চ বেতনের ভিত্তিতে দেশি-বিদেশি ব্যক্তিখাত পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিচিত্র ও ভিন্ন ভিন্ন পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষা অর্জন করছেন। এরা অনেক বেশি বিদেশমুখী এবং বিজাতীয় সংস্কৃতির ভক্ত। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানের ধনী উচ্চবিত্ত, উচ্চশিক্ষিত ছাত্রদের মধ্যে একধরনের আত্মপরিচয় সংকট (Identity Crisis) তৈরি হচ্ছে। ফলে এদের মধ্যে কেউ কেউ ইন্টারনেট,বৈশ্বিক প্রচারণা, মৌলবাদী রাজনীতি ইত্যাদির সহজ শিকারে পরিণত হচ্ছেন। ফলে প্রথমে ধর্মপরায়ণ পরে মৌলবাদী এবং অবশেষে নিষ্ঠুর জঙ্গিতে পরিণত হওয়ার ব্যতিক্রমী প্রবণতাও এদের সন্তানদের মধ্যে সম্প্রতি অপ্রত্যাশিতভাবে দেখা দিচ্ছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় তৃতীয় ধারাটি হচ্ছে ধর্মীয় শিক্ষার ধারা। এটি আবার দুটি উপধারায় বিভক্ত আলিয়া মাদ্রাসা ও কওমী মাদ্রাসা। আলিয়া মাদ্রাসা সরকারের আর্থিক সাহায্য গ্রহণ করে বিধায় সেখানে সরকারি জাতীয় পাঠক্রমের একটি ভূমিকা এবং কিছুটা সরকারি নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান। কিন্তু কওমী মাদ্রাসার উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ খুবই কম। এসব মাদ্রাসায় এখন পর্যন্ত গ্রামীণ দরিদ্র পিতামাতাদের সন্তান-সন্ততিই বেশি। এ কথা সহজেই অনুমেয় যে আমরা যদি বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভবিষ্যত নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে চাই তাহলে আমাদের এই তিন ধারার শিক্ষাকে ক্রমে ক্রমে একটি মূলধারায় নিয়ে আসতে হবে। তার অর্থ এই নয় যে, বাংলা মাধ্যম মূলধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া অন্য সব ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রাতারাতি বন্ধ করে দিতে হবে। এর জন্য যেটা দেখা দরকার তা হলো- মূলধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিমাণ গুণ, মান ও পাঠক্রম যাতে আরো বিকশিত হয়। এখানে সরকারি নীতি, বাজেট ব্যয়, পৃষ্ঠপোষকতার ধরন, এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
Title | সৃজনশীল পদ্ধতি ভালো ছাত্র হওয়ার সহজ উপায় |
Author | ফরিদা রেজা (Farida Reza) |
Publisher | সম্প্রীতি প্রকাশ |
ISBN | 9789847033624 |
Edition | 1st Published, 2021 |
Number of Pages | |
Country | Bangladesh |
Language | Bengali, |
0 Review(s) for সৃজনশীল পদ্ধতি ভালো ছাত্র হওয়ার সহজ উপায়