কক্সবাজার বলতে সাধারণের কাছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত বা সেন্টমার্টিনই বেশি পরিচিত। এক বা দুই দিন সময় নিয়ে সবাই এই দুই জায়গাতেই ছুটে আসে। কিন্তু তোমরা কি শুধু এই দুই জায়গা দেখে ফিরে যাবে। নিশ্চয়ই নয়। পুরো দেশ ঘুরে দেখতে দেখতে তোমরা হয়তো এরই মধ্যে প্রকৃতি প্রেমিক হয়ে উঠেছো। আর তাই কক্সবাজার এসে তোমাদের হিমছড়ি আসতে হবেই। সপ্তদশ শতকে কক্সবাজারের নাম ছিল 'পালংকি' সে সময় বর্মীরা আরাকান দখল করে নেয়। বর্মী সৈন্যরা আরকানীদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। আরাকানীরা সেখান থেকে পালিয়ে পালংকি অঞ্চলে এসে আশ্রয় নেয়। এই উদ্বাস্তুদের পূর্ণবাসনের জন্য ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্যাপ্টেন কক্স এখানে এসে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। বলা হয়ে থাকে হিরাম কক্সের নামানুসারে এখানকার নাম হয়েছে কক্সবাজার। শামুক, ঝিনুক, শুটকি বা চিংড়ির ঘের দেখতে চলে আসো মহেষখালী। সমুদ্র শান্ত থাকলে ট্রলার দিয়ে মহেষখালী আসতে পারো। মহেষখালীতে আসা মানে পাখির মেলায় যোগ দেয়া। এখানে এসে নামার পর পরিচিত-অপরিচিত হাজারো পাখি তোমাদের ঘিরে ধরবে। অবশ্য শুটকির গন্ধে হয়তো এতক্ষণে তোমাদের দম বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড়। কিছুক্ষণ থাকলে এই গন্ধ তোমাদের সহ্য ক্ষমতায় চলে আসবে। কাছেই মৈনাক পাহাড়। পাহাড়ের উপর সেই বিখ্যাত আদিনাথ মন্দির। দেখ এবং মুগ্ধ হও। প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন, কুতুবদিয়া, সোনা দ্বীপ ঘুরে কি দেখতে পাবে, তা আর আগে আগে বলি কেন। সবার আসা-যাওয়ার অভিজ্ঞতাটাতো আর এক রকম হবেনা। তাই অভিজ্ঞতা ভেদে এসব এলাকার সৌন্দর্য্যের মধ্যে অনেকটা ভিন্নতা রয়েছে। আশা করছি তোমাদের অভিজ্ঞতা হবে সবচেয়ে ব্যতিক্রম। টেকনাফে এসে তোমরা বাংলাদেশ ভ্রমনের ইতি টানতে পারো। টেকনাফের নাফ নদী বাংলাদেশ ও মায়ানমারকে বিভক্ত করেছে। এ পাড়ে দাঁড়িয়ে তোমরা মায়ানমারের আকিয়াব দেখতে পাবে। টেকনাফ ভাল ভাবে ঘুরে দেখবে। কারণ খুব শিগগিরই এই নাফ নদীর উপর সেতু তৈরি হয়ে বাংলাদেশ এবং মায়ানমার যুক্ত হবে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে। সেতু তৈরি হবার সম্ভাব্য জায়গাটিও দেখে আসতে পারো। আর মাথিনের কূপ না দেখে হয়তো টেকনাফের স্থানীয় লোকেরাই তোমাদের ফিরতে দেবেনা। টেকনাফ থানার পাশেই মাথিনের কূপ। কলকাতার এক পুলিশ কর্মকর্তা ও পরবর্তীতে নায়ক ধীরাজ ভট্টাচার্যকে নিয়ে এখানকার মেয়ে মাথিনের প্রেম কাহিনীর গল্প গোটা দেশেই চালু রয়েছে। এই কূপের সঙ্গে মাথিনের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ফেরার পথে একটা দিন সমুদ্র সৈকতে কাটিয়ে দাও। যদি আবহাওয়ার বিশেষ সতর্ক সংকেত থাকে, তাহলে বলতে হবে ভ্রমন ভাগ্য ভাল। কেননা এই সময়টাতে সমুদ্র আরো সুন্দর হয়ে উঠে। উত্তাল সমুদ্রে তোমাদের বসে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখো। দেখবে বাংলাদেশ ও তার প্রাকৃতিক নৈসর্গের এক অপার সৌন্দর্য তোমাদের কাছে ধরা দেবে। তোমাদের ভ্রমন হোক আনন্দময়।
0 Review(s) for বাংলাদেশের বিভিন্ন আকর্ষনীয় স্থান