বঙ্গবন্ধু একজন সাধারণ মানুষ নন, তাঁর ব্যক্তি পরিচয়, পারিবারিক পরিচয়কে ছাড়িয়ে যায় তাঁর রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পরিচয়। সেই পরিচয়ের পটভূমিতে তাঁর মৃত্যুকে, তার তিরোধানকে যদি না দেখতে পারি, তাহলে তার প্রতি সে হবে চরম অবিচার। পঁচাত্তরের সেই ভোরের হত্যাকাণ্ডে যারা অংশগ্রহণ করেছিল তারা সামরিক বাহিনীর সদস্য, কিন্তু তারা সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করে, এমন দাবী কেউ করে নি, বা করছে না। তারা সামরিক বাহিনীর একটা ক্ষুদ্র অংশের ক্রোধ ও ক্ষোভের প্রতিনিধি। তবে, যে যুক্তিতেই হোক, তাদের হত্যাকাণ্ডকে সামরিক শৃংঙ্খলাভঙ্গ বা গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে দেখা হয়নি। একটি বৈধ সরকারের জায়গায় আর একটি বৈধ সরকার ক্ষমতায় এলে তাই হতো। কিন্তু ঘটনার পরম্পরা সে পথে অগ্রসর হয়নি। ইতিহাসের কোনো এক সূত্রানুযায়ী, এক অবৈধতাকে বৈধ করার প্রয়োজনে ঘটনার শুরুতেই যে অবৈধত, যে সংবিধান-বিরোধিতা তাকেও আইনের শাসন থেকে রক্ষা করতে হয়েছে। আর এভাবেই এসেছে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স, সংবিধানের ৫ম-৮ম সংশোধনী, সবই একসূত্রে বাঁধা। রাষ্ট্রপ্রধানের হত্যার মতো অপরাধ যে আজ পর্যন্ত অপরাধ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি লাভ করেনি, এ এক সত্য, এ এক রাজনৈতিক সত্য এবং একই সঙ্গে এ এক নৈতিক ও সাংবিধানিক মিথ্যাচার। এই মিথ্যার সঙ্গে আমাদের বসবাস করতে হচ্ছে আমরা রাজনৈতিক ভাবে এই মিথ্যাচারের মুকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছি।
0 Review(s) for ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান