পিরোজপুর নামকরণের একটা সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। নাজিরপুর উপজেলার শাখারী কাঠির জনৈক হেলালউদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেষ বংশধর হিসেবে দাবী করেছিলেন। তাঁর মতে বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে এসেছিলেন এবং আত্মগোপনের এক পর্যায়ে নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পারে একটি কেল্লা তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয় এবং শাহ্ সুজা তার দুই কন্যাসহ আরাকানে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অপর এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী এক শিশু পুত্রসহ থেকে যান। পরবর্তীতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে ধীরে পশ্চিমে চলে এসে বর্তমান পিরোজপুরের পার্শ্ববর্তী দামোদর নদীর মুখে আস্তানা তৈরি করেন। এ শিশুর নাম ছিল ফিরোজ এবং তার নামানুসারে নাম হয় ফিরোজপুর। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আঞ্চলিক কথ্য ভাষার উচ্চারণগত বিচ্যুতিতে এক সময়ের ফিরোজপুর নামটি পিরোজপুর নামে প্রবর্তিত হয়ে গেছে।সুন্দরবনের কোলঘেঁষা কালীগঙ্গা, বলেশ্বর, দামোদর, সন্ধ্যা বিধৌত প্রাকৃতিক সবুজের লীলাভূমি পিরোজপুর। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে বাকেরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন নদী গর্ভে, মোহনায় ছোট ছোট দ্বীপাঞ্চল সৃষ্টি এবং এর দ্রুত বৃদ্ধি হতে থাকে। দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবনের জঙ্গল কাটা হলে আবাদযোগ্য ভূমির আয়তনও ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ সময় ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ, দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক বিদ্রোহ, পিরোজপুরের কালীগঙ্গা, কচাঁ, বলেশ্বর প্রভৃতি নদীতে মগ জলদস্যুদের উপদ্রব, বিশেষত: ঐ সকল নদীতে চুরি, ডাকাতি, লুন্ঠনসহ বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে সাধারণ প্রশাসন এবং ভূমি প্রশাসনের সুবিধাজনক অধ্যায় সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিরোধের বিচারকার্য তড়িৎ সম্পাদনের লক্ষ্যে পিরোজপুর মহকুমা স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। বাকেরগঞ্জ তদানীন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এইচ.এ.আর. আলেকজান্ডার ১৮৫৬ সালের ২৪ এপ্রিল পিরোজপুরে মহকুমা স্থাপনের প্রস্তাব দেন। ১৮৫৯ সালের ২৮ অক্টোবর পিরোজপুর মহকুমা স্থাপিত হয়। দামোদর নদের দক্ষিণ পাড় চরভুমি, আবাদি জমি ও বিক্ষিপ্ত জনবসতির মধ্যেই ১৮৬৫ সাল থেকে শহর নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় এবং সরকারি ভবন, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, থানা প্রভৃতি নির্মিত হতে থাকে। গড়ে উঠতে থাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দোকানপাঠ। ১৭৯০ সনে তৎকালীন বাখরগঞ্জ জেলায় ১০টি থানা স্থাপিত হয়। যার একটি পিরোজপুর সদরের পাড়েরহাট নিকটবর্তী টগরা গ্রামে টগরা থানা। ১৮৫৯ সালে পিরোজপুর মহকুমা ঘোষিত হলে পিরোজপুর শহরকে মহকুমা শহর করা হয় এবং টগরা থেকে থানা স্থানান্তর করে পিরোজপুর থানা হিসেবে নামকরণ করা হয়। পিরোজপুর মহকুমা স্থাপনের সংগে সংগে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য (বর্তমান ইন্দুরকানী উপজেলার) পাড়েরহাট বন্দর সংশ্লিষ্ট "টগড়া" হতে থানা এবং কাউখালী হতে মুন্সেফি আদালত পিরোজপুর সদরে স্থানান্তর করা হয়। ১৮৬৫ সালে পিরোজপুর মিনিসিপ্যালিটি স্থাপিত হয়। ১৮৮৫ সালে পিরোজপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ফলে এটি পৌরশহর হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়। পিরোজপুর মহকুমা ১৯৮৪ সালে জেলায় রূপান্তরিত হলে পিরোজপুর শহর জেলা শহরের মর্যাদা লাভ করে।
Title | বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি (পিরোজপুর) |
Author | শামসুজ্জামান খান, shamsujaman khan |
Publisher | বাংলা একাডেমি |
ISBN | |
Edition | ডিসেম্বর - ২০২১ |
Number of Pages | 392 |
Country | Bangladesh |
Language | Bengali, |
0 Review(s) for বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি (পিরোজপুর)