আমার কথা
"সবার উপরে মানুষ সত্য' কথাটা ছোটবেলা থেকে শুনছি। মানবের তরে এ পৃথিবী, দানবের তরে নয়। বার বার উচ্চারিত এ কথাগুলো বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনের পর থেকে ব্যঙ্গার্থ হয়ে গেছে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে যে অত্যাচার ও নির্যাতন শুরু তা এখনও অব্যাহত। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আদর্শ, নীতি, নেতৃত্ব দিয়ে মোকাবিলা করতে না পেরে, শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক, পেশাগত ও ব্যবসায়িক ইত্যাদি নানাভাবে হয়রানি, নির্যাতন ও অত্যাচার করে দমাবার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা একটা দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আজকের বাংলাদেশ এই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ক্ষতি যে কত মারাত্মক, সর্বগ্রাসী তা আজ ২০০৩ সালের বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে সহজেই অনুধাবন করা যায়। মানবাধিকার লঙ্ঘনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে প্রথম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ভোট দেওয়াটাই যেন অপরাধ। নিজের মনমতো সরকার গঠন করার চিন্তা করাটা অপরাধ। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা চাওয়া অপরাধ। মানুষকে ক্ষমতার জোরে, অস্ত্রের জোরে সন্ত্রাসী দিয়ে নির্যাতন চালিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। এ সরকার ৪৫ হাজার সন্ত্রাসীর মামলা তুলে বন্দীদের মুক্তি দিয়ে ও সন্ত্রাসীদের উৎসাহ নিয়ে চরম মানবতাবিরোধী কাজ করেছে। সব থেকে কষ্টকর হলো এদের প্রতিহিংসা থেকে ছোট শিশুরাও রেহাই পায় নি। বাবা-মা বা ভাই আওয়ামী লীগ করে, অপরাধে শিশু কন্যাকে গণধর্ষণ ও হত্যা করার মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা। পাশবিক অত্যাচারের হাত থেকে বয়োবৃদ্ধরাও রেহাই পায় নি। হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে, লজ্জা ঢাকতে আত্মহত্যা করেছে মেয়েরা। হাত, পা, চোখ হারিয়েছে কত যুবক, পঙ্গুত্ব
আমার কথা
লক্ষ্যে এ অভিযানের কথা বলা হলেও তারা একজনও চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে ধরতে পারে নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করার নামে তারা কিছুটা তৎপর থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সাংবাদিক প্রভৃতি পেশার লোকজনকে গ্রেফতার, হয়রানি ও নির্যাতন করেছে। এ অভিযানে ৫৮ জন সেনা হেফাজতে নির্যাতনে নিহত হলে তা হার্টফেলে মৃত্যুর কথা বলে চালানো হয়। যা নিহতের পরিবার কোনোমতে মেনে নিতে পারে নি। তারা এজন্য সরকারকে দায়ী করে বিচারের দাবি জানায়। এ দাবি জোরদার হতে দেখে সরকার দায়মুক্তি অধ্যাদেশ- ২০০৩ জারি করে। এটা কখনো মেনে নেওয়া যায় না বলেই আমার সর্বশেষ লেখা 'ক্লিনহার্ট অপারেশন ও দায়মুক্তি অধ্যাদেশ' এ বইয়ে গ্রন্থিত হলো।
প্রতিদিন হাজার হাজার ঘটনা ঘটছে, তার কয়টি ঘটনা আর পত্রিকায় ওঠে? তারপর যাও পত্রিকায় ছাপা হয় সেই লোমহর্ষক ঘটনাই মানুষের মনে দাগ কাটে। তবে পত্রিকাগুলো যতটুকু ঘটনা ছাপতে পারে তার থেকেও ভয়াবহ এবং সংখ্যায় অনেক অনেক বেশি ঘটনা অগোচরে থেকে যায়।
আমার এ লেখায় ঘটে যাওয়া হাজার হাজার ঘটনার মাঝে কিছু ঘটনা তুলে ধরলাম। সবকিছু এই স্বল্প পরিসরে তুলে ধরা সম্ভব নয়। তবে আমার আহ্বান রইল যে, যেভাবে পারেন ঘটনাগুলো সংগ্রহ করে রাখুন। এ বইয়ের সংযুক্ত অধ্যায়টি পাঠকের বিবেচনায় তুলে ধরা হলো। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দুর্নীতি ও সন্ত্রাস করে মানবতাবিরোধী
কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে আর দেশে ও বিদেশে তার খেসারত দিচ্ছে বাংলাদেশের
জনগণ। এই দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মানুষকে মুক্তি কিভাবে দেওয়া যায় পাঠকের
মতামতের অপেক্ষায় রইলাম ।
এ গ্রন্থের তথ্য সংগ্রহ করে আমাকে সহযোগিতা করেছেন পারভীন রফিক লিলি, মোঃ আমিনুল ইসলাম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, শিকদার আরাফাত হোসেন সবুজ ও লিটন। প্রুফ দেখে দিয়েছেন কৃষ্ণ আচার্য ও আরিফুল মাওলা । তাদের কাছে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। তাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩
শেখ হাসিনা
Title | শেখ হাসিনা রচনাসমগ্র ২ |
Author | শেখ হাসিনা, Sheikh Hasina |
Publisher | মাওলা ব্রাদার্স |
ISBN | |
Edition | 8th Edition - October , 2019 |
Number of Pages | 388 |
Country | Bangladesh |
Language | Bengali, |
0 Review(s) for শেখ হাসিনা রচনাসমগ্র ২