স্বাধীনতা উত্তর ট্র্যাজেডি মুজিব থেকে জিয়া। লেখক সাহাদত হোসেন খান।
১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক দিগন্তে চোখ বুলালে দেখা যাবে দেশটি যেন রক্তে ভাসছে। একটির পর একটি ট্র্যাজেডি দেশকে লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে। মাত্র ৭ বছরের মধ্যে সামরিক অভ্যুত্থানে দুজন প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হয়েছে। পৃথিবীতে বাংলাদেশ ছাড়া এমন উদাহরণ আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। নিহতদের একজন শুধু প্রেসিডেন্ট নন, জাতির পিতা। ভারতেও জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন কেবল গান্ধী নিজে। তার পরিবারের কাউকে টার্গেট করা হয়নি। আর গান্ধীও কোনো সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হননি। অন্যদিকে বাংলাদেশের সামরিক অভ্যুত্থানের চেহারা এত ভয়ঙ্কর ও নির্মম যে, আপনাআপনি দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। দুনিয়ায় এমন কোনো নেতা খুঁজে পাওয়া যাবে না যার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ কম। আবার কারো বিরুদ্ধে বেশি। পার্থক্য কেবল এতটুকুই। আমি স্বীকার করি যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দোষ ত্র“টির উর্ধেŸ ছিলেন না। তাই বলে তাকে হত্যা করতে হবে কেন। তাও আবার বংশসহ। পৃথিবীর কোনো আইন বলে না যে, একজনের অপরাধের জন্য অন্যজনকে হত্যা করা যায়। শেষ যুক্তি হিসেবে রক্তপাতহীনভাবে বঙ্গবন্ধুর পতন মেনে নিলেও তার নিজের, তার পরিবারের নারী, পুরুষ ও শিশু সবার পাইকারী হত্যাকাণ্ড কোনোমতেই মেনে নেয়া যায় না। কোনো নিন্দা ও শোক এ গণহত্যার প্রতিবাদ জানানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শুধু নন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের আরো দুজন সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এটিএম হায়দার এবং রংপুরের ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল খোন্দকার নাজুমল হুদাকেও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। রক্তক্ষরণ এখানেই থেমে যায়নি। সিপাহী বিপ্লবের অগ্নিপুরুষ সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহেরকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকারীদের প্রতিও আমার সমান ঘৃণা। প্রেসিডেন্ট জিয়া যা করেছেন সবই ভালো করেছেন তা বলা সম্ভব নয়। সবার মতো তিনিও দোষে গুণে মানুষ। জিয়ার ঘাতক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর রহমানের ছবিটা আমার অন্তরে ভেসে উঠলে আমি ভয়ে শিউরে ওঠি। তার নিষ্ঠুরতা নিয়ে কখনো কখনো ভাবি। কর্নেল মতি প্রেসিডেন্ট জিয়াকে একটি দুটি গুলি নয়, ব্রাশফায়ারে হত্যা করেন। ম্যাগাজিন খালি হওয়া নাগাদ ট্রিগার ধরে রাখেন এবং অস্ত্র দিয়ে জিয়ার শরীর উল্টে দেন। গুলিতে তার শরীর ঝাঁঝরা করে দেয়া হয়। জিয়ার একটি চোখ কোটর থেকে বের হয়ে যায়। এই বীভৎস নিষ্ঠুরতার কোনো জবাব নেই। জিয়া শুধু প্রেসিডেন্ট নন, তিনি ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার। চট্টগ্রামের ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরের প্রতিহিংসাপরায়ণ অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হন। জিয়া হত্যার বদলা নিতে উন্মত্ত সৈন্যরা জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যা করে। জেনারেল মঞ্জুরও ছিলেন সেক্টর কমান্ডার। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সামান্যতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে হত্যা করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু তার ঘাতকরা ছিলেন সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসার। জিয়াকে হত্যা করে তারা শুধু সেনাবাহিনী নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেও ভুলুণ্ঠিত করেছে।
প্রকাশনায় আফসার ব্রাদার্স।
Title | স্বাধীনতা উত্তর ট্র্যাজেডি মুজিব থেকে জিয়া |
Author | সাহাদত হোসেন খান, shadhat hossain khan |
Publisher | আফসার ব্রাদার্স |
ISBN | 9789849029900722 |
Edition | ৩য় মুদ্রণ জুলাই ২০২৪ |
Number of Pages | 576 |
Country | Bangladesh |
Language | Bengali, |
0 Review(s) for স্বাধীনতা উত্তর ট্র্যাজেডি মুজিব থেকে জিয়া